নগর বিএনপি/ লালদিঘী অধরা, দৌঁড়ঝাপ যতো নাসিমনেই মাপা

চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দান। প্রতিটি দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কাছে এটি একটি রাজনৈতিক তীর্থস্থান। যে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে লালদিঘী ময়দানের নামটি জড়িত। নগর বিএনপির দুই শীর্ষ পদে ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাসেম বক্কর আসার পর রাজনৈতিক কর্মসূচির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও ঐতিহ্যমণ্ডিত এই স্থানে পা ফেলতে পারেননি। অতীতে বিএনপি অসংখ্য কর্মসূচি পালন করেছে এই লালদিঘী ময়দান থেকে, যা এখন কেবলই স্মৃতি।

মহানগর আওয়ামী লীগের আমৃত্যু সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে লালদিঘী ময়দানে গিয়ে গর্জে ওঠতেন। এই লালদিঘীতে সমাবেশ করতে এসে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮৮ সালে হামলার শিকার হন। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে দলের ২৪ জন নেতাকর্মী প্রাণ হারান। স্বৈরাচার এরশাদের শাসনামলে সেই গণহত্যার প্রতিবাদ সমাবেশও শেখ হাসিনা করেছেন লালদিঘী ময়দানে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিসনদ ‘ছয় দফা’ ঘোষণা করেছিলেন এই লালদিঘী ময়দানে।

গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে নগর নেতারা দুই দফা চেষ্টা চালিয়েছিলেন লালদিঘীতে সমাবেশ করতে। ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচিতে গন্ডগোলের অজুহাতে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ তাদের অনুমতি দেয়নি। এককভাবে বিএনপি এবং সর্বশেষ ঐক্যফ্রন্টের জনসভার জন্য নেতারা কাজির দেউড়ি চত্বর চেয়েও পাননি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের। এ নিয়ে নেতারা যাই বলুক কর্মীদের মাঝে আছে হতাশা ও ক্ষোভ।

চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দান।
চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দান।

সাবেক ছাত্রদল নেতা নুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘লালদিঘীতে সমাবেশ করতে না পারা বিএনপির জন্য লজ্জার, হতাশার। বিএনপি কোন নিষিদ্ধ দল নয়। তারা কেন দলীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক থাকবে? এটা নেতাদের ব্যর্থতা। ফটোসেশন করে লন্ডনে ছবি পাঠানোর জন্য বর্তমান নেতারা বসে থাকেন। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।’

উত্তর জেলা যুবদল কর্মী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপিকে কেন পুলিশ থেকে অনুমতি নিতে হবে সেটা আমার বুঝে আসে না। বিএনপি কর্মসূচি পালন করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা দেবে। পুলিশ হয়ে গেছে রাষ্ট্রের মালিক। এটা আমাদের নেতাদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

নগর যুবদল কর্মী মোস্তাফিজ জামশেদ বলেন, ‘বিষয়টির দুই দিক। এক হলো প্রশাসনিক বাঁধা। অপরটি আমাদের নেতাদের দুর্বলতা। নেতারা যদি যথাযথ ভূমিকা পালন করতেন প্রশাসন বাঁধা দিতো না।’

এ বিষয়ে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে তো গণতান্ত্রিক সরকার নেই। পুলিশতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় আমরা পুলিশের অনুমতিনির্ভর। বিএনপি মাঠে নেমেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে। তখন মিছিল মিটিংয়ের ওপর এই পুলিশি খবরদারি আর থাকবে না।’

এ ব্যর্থতার অভিযোগের তীর যার দিকেই সবচেয়ে বেশি সেই নগর সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি।

তবে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর বলেন, ‘লালদিঘী মাঠে বৃক্ষমেলা চলছে। তাই এবার আমরা মাঠ বরাদ্দ পাইনি।’

আপনাদের দায়িত্বে তিন বছরেও কেন লালদিঘী ময়দানে কোন কর্মসূচি পালন করতে পারেননি? এ প্রশ্নে আবুল হাসেম বক্কর বলেন, ‘সরকারের পুলিশ বাহিনী আমাদের অনুমতি দেয়নি। তারা আমাদের জনসমাগমকে ভয় পায়। সামনে আমরা লালদিঘী ময়দানে কর্মসূচি রাখার চেষ্টা করবো।’

‘সর্বশেষ কবে লালদিঘী মাঠে বিএনপি সমাবেশ করেছে’—দলের নগর এবং সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলে তারা কেউ বলতে পারেননি। তাদের সবার উত্তর ছিল অভিন্ন—‘স্মরণে নেই, বলতেও লজ্জা পাচ্ছি’।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!