কাঠফাটা গরমে এসি-ফ্যানের বাজারও ‘গরম’, চট্টগ্রামে দাম বাড়ছে ইচ্ছেমতো

চট্টগ্রামে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে এসি ও ফ্যানের দাম। দু’সপ্তাহের ব্যবধানের এসব ইলেকট্রনিক পণ্য প্রতিটি দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেড়েছে৷ আবার অনেকগুলো দ্বিগুণ দামেও বিক্রি হচ্ছে। গরম ও লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ মানুষ নিরুপায় হয়ে বাড়তি দামে কিনছেন এসব পণ্য। আর এ সুযোগে পকেট ভারী করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।

চট্টগ্রাম নগরীর রাইফেল ক্লাব মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আমতলে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

তবে বিক্রেতাদের দাবি, ঈদের আগে থেকে ফ্যান ও এসির চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় জোগান কম। ব্র্যান্ডের দোকানগুলো চাহিদা মতো পণ্য সরবরাহ করছে না। সেজন্য নন-ব্র্যান্ড ও চায়না ফ্যান বিক্রি করছেন তারা।

কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগ, লোডশেডিং ও তীব্র তাপদাহকে পুঁজি করে ইচ্ছামতো এসি, চার্জার ফ্যান, সিলিং ফ্যান এবং এয়ার কুলারের দাম বাড়তি নিচ্ছেন বিক্রেতারা।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ বেশি ভিড় করছে চার্জার ফ্যান ও এয়ার কুলারের দোকানে। আর উচ্চবিত্তরা ভিড় করছে এসির দোকানে।

এদিকে ছোট নন ব্র্যান্ডের টাইফুন ফ্যানগুলোর কিছুদিন আগে ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, সেই ফ্যানের দাম এখন ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ডিফেন্ডার ব্র্যান্ডের ফ্যান ১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। নোভা ফ্যান ১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। এস কে ডিফেন্ডার ফ্যান (১৪ ইঞ্চি) বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়।

এছাড়া ২ হাজার ৫০০ টাকার ভিশন ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। ২ হাজার ৮০০ টাকার কাইতান ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। ৬ হাজার টাকা পাকিস্তানি ফ্যান ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে বিক্রি করছে ৭ হাজার টাকায়। ৫ হাজার ৫০০ টাকার দেশি ব্র্যান্ডের ওয়াল্টন ফ্যান ৭ হাজার টাকায়।

ব্র্যান্ডের স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৮ হাজার টাকায়। দেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। বিদেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। চার্জার ফ্যানগুলো প্রতিটি ১ থেকে ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকায়। ১৪ হাজার টাকার ভিশন এয়ারকুলার বিক্রি হচ্ছে ১৭ হাজার টাকায়। একই ব্র্যান্ডে ৯ হাজার টাকার ছোট এয়ারকুলার বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকায়।

একইসঙ্গে ব্র্যান্ডের এক টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৭৭ হাজার টাকায়, দেড় টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। ভিশন এক টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ হাজার ও দেড় টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৬৭ হাজার টাকায়। গ্রি এর এক টনের এসি ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

যমুনা ইলেকট্রনিক্সের ইনভার্টারসহ দেড় টন এসি ৬৬ হাজার টাকা ও এক টন এসি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকায়। ইনভার্টার ছাড়া দেড় টন এসি ৫৭ হাজার টাকা ও এক টন ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওয়ালটন দেড় টনের এসি ৭৫ হাজার টাকায়, এক টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ হাজার টাকায়।

তবে এ বছর লোডশেডিংয়ের কারণে অন্যান্য ফ্যানের তুলনায় চার্জার ফ্যানের বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসাসীরা। চার্জার ফ্যান, স্ট্যান্ড ফ্যান, সিলিং ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার ও এয়ারকুলারের চাহিদা বেশি।

চার্জার ফ্যান কিনতে আসা আরশাদুল হক বলেন, ‘তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে, একইসঙ্গে লোডশেডিং তো আছেই। এ গরমে চার্জার ফ্যান পরিবারের সদস্যদের খুবই প্রয়োজন, তাই কিনতে আসলাম। এবার চার্জার ফ্যানের দাম অনেক বেশি, প্রত্যেকটা পণ্যের দাম বাড়তি। আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে সবকিছু।’

ওয়ালটনের শোরুমে কিস্তিতে এসি কিনতে আসেন সাইদুল জামান। তিনি বলেন, ‘এবার তাপমাত্রা বেড়েছে, সামনে আরও গরম বাড়ার সম্ভাবনা আছে। এসির বাজারে হাত দেওয়া যাচ্ছে না, যে দাম। আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য একটা এসি স্বপ্নের মত। আমাদের দেশি ব্র্যান্ড ওয়ালটনে কিস্তির সুবিধা রয়েছে। এবার দাম একটু বেশি হলেও এক টনে একটা এসি নিলাম কিস্তিতে।’

রাইফেল ক্লাব মার্কেটের ব্যবসায়ী নাহিদ বলেন, ‘রমজান থেকে তাপমাত্রা বাড়ছে। ঈদের আমেজের কারণে তেমন ফ্যানের চাহিদা ছিল না। যার ফলে দামও তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু ঈদের পর থেকে গরম বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে ক্রেতার ভিড়। তবে ক্রেতার চাহিদা বাড়লেও পণ্য সংকটের জন্য দামও কিছু বাড়তি। গরমের মাত্রা বাড়লে এসব পণ্যের দামও আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!