চট্টগ্রামের মেয়র/ ছালাম-নুরু দুই ভাই মনোনয়নের লড়াইয়ে মুখোমুখি

আগামী বছরের মার্চে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আবদুচ ছালাম। নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ছালাম গত দশ বছর ধরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দায়িত্ব পালন শেষে এখন মেয়র নির্বাচনের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।

এ খবর অনেকটাই পুরানো হলেও এবার আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে লড়ার জন্য বড় ভাইয়ের পাশাপাশি মেজ ভাই সৈয়দ নুরুল ইসলাম নুরুও জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি স্বেচ্ছাসবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রচার উপ কমিটির সহ সম্পাদক। তৎপরতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ওয়েল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ নুরুল ইসলাম।

নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরা এলাকার বাসিন্দা ও চট্টগ্রামের ওয়েল গ্রুপের কর্ণধার আবদুচ ছালাম ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সিডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যবসায়ী ছালাম নগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম ৮ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েও তিনবারই ব্যর্থ হন। ওই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হন জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল।

সংসদ নির্বাচনে তিন দফা স্বপ্নভঙ্গ হওয়ার মাঝেই ২০১৫ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সভানেত্রীর সামনে মেয়র পদে নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেন আবদুচ ছালাম। কিন্তু ওই সময় দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।

এরপর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়েছিলেন নাছির-ছালাম দুজনই। এমনকি সিডিএ থেকে ছালামের বিদায়ের পর কঠোর সমালোচনায় মেতে উঠেন মেয়র নাছির। অন্যদিকে সরাসরি নাছিরের সমালোচনা না করলেও তার অনুসারীরা নানা ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়রের সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মেয়র নাছিরের সঙ্গে ছালামের এখন যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে সেটা মূলত মেয়র পদে মনোনয়ন যুদ্ধকে ঘিরেই। কিন্তু এই যুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্ত হয়েছেন ছালামের আপন ছোট ভাই এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সৈয়দ নুরুল ইসলাম নিজেই। আবদুচ ছালাম মেয়র আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনও নেতিবচাক মন্তব্য না করলেও নুরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকটা খোলাখুলি সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচনা করে আসছেন।

তবে মেয়র পদে আবদুচ ছালামের মনোনয়নের লবিংয়ের বিষয়টি প্রকাশ্য হলেও সৈয়দ নুরুল ইসলামের বিষয়টি অনেকটাই আকস্মিক। ভাইয়ের পাশাপাশি নিজের লবিংয়ের যৌক্তিকতা দেখাতে গিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করছি। মোহরা ওয়ার্ড ছাত্রলীগ-যুবলীগের শীর্ষ পদে ছিলাম। এক দশকের বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রচার উপ কমিটিতে কাজ করছি। দলের একজন নিবেদিত কর্মী হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়ন আমি চাইতেই পারি। এছাড়া ব্যবসায়ী হিসেবেও কোনও কোনও কোরাম থেকে আমার নাম আলোচনায় আসছে। কেননা আমি ওয়েল গ্রুপের সিইও ছাড়াও এফবিসিসিআই ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’

বড় ভাই আবদুচ ছালাম মেয়র পদে নির্বাচনের জোর তৎপরতা চালিয়ে আসছেন জেনেও কেন নির্বাচনে আগ্রহী হয়ে উঠলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বড় ভাই দীর্ঘদিন নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তিনি গত ১০ বছর সিডিএর চেয়ারম্যান হিসেবে চট্টগ্রামের আমূল পরিবর্তনে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। এখন নেত্রী যদি উনার কাজে মূল্যায়ন করে উনাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেন সেটা উনার বিষয়। কিন্তু আমারও পৃথক রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিচয় আছে, তাই আমিও মেয়র পদে মনোনয়ন চাই। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করব।’

তবে মনোনয়ন নিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই বলে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ আবদুচ ছালাম বলেছেন, ‘সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে যতটুকু কাজ করেছি, তার চেয়ে আরও বড় পরিসরে জনগণের সেবা করার সুযোগ সিটি কর্পোরেশন। সিডিএ থেকে সিটি কর্পোরেশনে কাজের সুযোগ বেশি, পরিধি বড়। এতে নির্বাচিত হয়ে যেতে হবে। কাজপাগল মানুষ হিসেবে চসিকে যেতে পারলে অনেক বেশি কাজ করা যাবে।’

নিজেকে যোগ্য প্রার্থী দাবি করে ছালাম বলেন, ‘প্রার্থিতা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে নেত্রীর ওপর। আর তিনি ভালো করেই জানেন, কাকে দিলে নির্বাচনে জিতে আসা যাবে। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ। তিনি জানেন, কে চট্টগ্রামের সঠিক উন্নয়ন করতে পারবেন। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছেন দলীয় সভানেত্রীর ওপরই। চট্টগ্রামের বিষয়ে তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন।’

‘তবে সুযোগ আসলে আলহামদুল্লিাহ, সুযোগ না আসলেও আলহামদুলিল্লাহ’—এ সঙ্গে মন্তব্য করেন ছালাম।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!