৫ শর্তে স্বদেশ ফেরার আকুতি লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশে

মিয়ানমারের উগ্র মগের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দুই বছর পূর্তিতে সমাবেশ করেছে। রোববার (২৫ আগস্ট) সকালে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ৫ দফা দাবিতে রোহিঙ্গাদের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে লাখো রোহিঙ্গা উপস্থিত হয়েছেন। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলে এ সমাবেশ। এতে রোহিঙ্গারা ৫ দফা দাবির কথা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে লাখো রোহিঙ্গা স্বদেশে ফেরার আকুতি জানান। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারে ফিরবে না বলে জানিয়ে দেন তারা।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচারসহ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত, ভিটেবাড়ি পুনরুদ্ধার, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা দেওয়া হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে। অন্যতায় যাবে না।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর হিউম্যান রাইটসের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ উল্লাহ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। সমাবেশে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। এই পাঁচ দফা দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চাই না।

এর আগে সকাল থেকে দলে দলে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও নানা স্লোগান নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা। তাদের নানা স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা। এখানে ছাড়াও উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের উনচিপ্রাংসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাখাইনে সংগঠিত গণহত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশ গুলোতেও নাগরিকত্ব এবং ভিটেমাটি ফিরিয়ে দিয়ে প্রত্যাবাসন দাবি করা হয়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল মনসুর জানান, সকাল থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো শান্তিপূর্ণভাবে এ সমাবেশ করে শরণার্থী রোহিঙ্গারা।

Rohinga-02

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, সমাবেশে রোহিঙ্গারা কি বলবে তা কয়েক দিন ধরে প্রত্যাবাসনবিরোধী কিছু এনজিও কর্মকর্তা তাদের শিখেয়েছেন। পাশাপাশি সমাবেশের নামে রোহিঙ্গাদের দিয়ে এটি একটি ঐক্যের মহড়াও বলা যেতে পারে। তাই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কথা বলে রোহিঙ্গারা নিজেদের দাবীর প্রতি অনড় রয়েছেন। পাশাপাশি এই দাবী পুরাপোরি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসনে না যেতে কঠোর ভাবে সতর্ক করা হয়েছে রোহিঙ্গা নেতাদের।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, প্রত্যাবাসন দিন দিন কঠিনের দিকে যাচ্ছে। কিছু অসাধু এনজিও সংস্থার কারণে প্রত্যাবাসন বার বার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গারা একেক দিন একেক ওজুহাতে মানববন্ধন, সমাবেশ ও মিছিল, মিটিং করে অশনি সংকেত এর আভাস দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। সুতারাং বর্তমান সময় পর্যবেক্ষন করে সরকারকে প্রত্যাবাসনে কঠোর হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

উলে­খ্য, রোববার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকটের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৭ সালের এ দিনে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। এরপর থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গারা। বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সোয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!