স্মার্টকার্ড পাচ্ছে কক্সবাজার সদরের ২ লাখ ৬০ হাজার ভোটার

স্মার্টকার্ড পাচ্ছে কক্সবাজার সদরের ২ লাখ ৬০ হাজার ভোটার 1কক্সবাজার প্রতিনিধি : বহু কাঙ্খিত ‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র’ তথা ‘স্মার্টকার্ড’ পাচ্ছে কক্সবাজার সদর উপজেলার প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার ভোটার। ২০১৫ সালের আগে যারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, তারাই মূলতঃ ‘স্মার্টকার্ড’-এর আওতায় পড়েছে। এর পরের ভোটারদের বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘স্মার্টকার্ড’ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। ৩ টিমে বিভক্ত হয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। প্রতি টিমে ৫ জন করে অপারেটর থাকবে, যারা ভোটারদের চোখের আইরিশ ও দশ অঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ করবে। এছাড়া প্রতি টিমে ৩ জন সহযোগি থাকবে, যারা সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে কার্ডের তথ্য খুঁজে বের করে স্লিপ লিখে আবেদনকারীর হাতে দিবে এবং বাক্স হতে খুঁজে বের করে ভোটারদের করবে। থাকবে একজন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা সদর উপজলা নির্বাচন অফিসারের কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। ওই বিভাগের পরিচালক (অপাঃ) মোঃ আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত পত্রে (স্মারক নং-১৭.০০.০০০০.৬..৫১.০০৮.১৭/৬৫) এসব তথ্য লিখা আছে। তবে সদর উপজেলার সকল ভোটার এখনই স্মার্টকার্ড পাবেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছেনা। দেরীতে হলেও সবাই স্মার্টকার্ড পাবেন।

মোঃ আবদুল বাতেন স্বাক্ষরিত পত্রে আরো বলা হয়েছে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বন্ধ রেখে শনিবার কার্যক্রম চালানো যেতে পারে। ছুটির দিনেও অব্যাহত রাখার সুযোগ আছে। একটি এলাকায় বিতরণ শেষ হলে ১/২ দিন বিরতি রেখে পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের দেয়া তথ্য মতে, সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড মিলে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ভোটার রয়েছে।

সদর নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, হালনাগাদ বাদে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৬৩৭, মহিলা ভোটার ৩৭৪৫। সর্বমোট ৭৩৮২ ভোটার। ২ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৪০৭৫, মহিলা ভোটার ৩৫২০। সর্বমোট ৭৫৯৫ ভোটার। ৩ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৯২৩, মহিলা ভোটার ২০১৩। সর্বমোট ভোটার ৫৯৩৬ জন। ৪ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৭৬৩, মহিলা ভোটার ৩৫৮৫। সর্বমোট ভোটার ৭৩৪৮। ৫ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩২০০, মহিলা ভোটার ৩১৭৮। সর্বমোট ভোটার ৬৩৭৮। ৬ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৭২২, মহিলা ভোটার ৩৩৭৯। সর্বমোট ভোটার ৭১০১। ৭ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৯৫৭, মহিলা ৪০৩০। সর্বমোট ভোটার ৭৯৮৭। ৮ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩২৯৮, মহিলা ভোটার ৩১৩০। সর্বমোট ভোটার ৬৪২৮। ৯ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩০৩১, মহিলা ভোটার ৩০৩৯। সর্বমোট ভোটার ৬০৭০। ১০ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৫৮৫, মহিলা ভোটার ২৯৬২। সর্বমোট ভোটার ৬৫৪৭। ১১ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩০৪৯, মহিলা ভোটার ২৪৬৬। সর্বমোট ভোটার ৫৫১৫। ১২ নং ওয়ার্ডে পুরুষ ভোটার ৩৫২৩, মহিলা ভোটার ২৫২৯। সর্বমোট ভোটার ৬০৫১।

সদরের ইসলামপুরে ১০৯৬৪, ইসলামাবাদে ৯৫৪৬, ঈদগাঁওতে ১৮১২৮, জালালাবাদে ৯৫৪৬, পোকখালীতে ১২৯৯৮, ভারুয়াখালীতে ১৩৩৭, পিএমখালীতে ২০৩২৮, চৌফলদন্ডিতে ১৭৪৪০, খুরুশকুলে ২৬২৩৩ এবং ঝিলংজায় ২১৩২১ ভোটার রয়েছে। (সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের ১৩-০৮-২০১৭ তারিখের সর্বশেষ তথ্য) আগের জাতীয় পরিচয়ের মতো খুব একটা সহজ উপায়ে এ কার্ড দেয়া হবেনা। ভোটারদের আবারো পূরণ করতে হবে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত কিছু নীতিমালা।

কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা জানিয়েছেন, ‘স্মার্টকার্ড’ ভোটারের অধিকার যেমন সংরক্ষণ করবে, তেমনি এটি সরকারের জন্য বিরাট অর্জন। একটু বিলম্ব হলেও কঠিন একটি কাজকে বাস্তবায়ন করছে সরকার।

তিনি জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির স্মার্টকার্ডের জন্য আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে। আর এই কাজে শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনী নয়, দুই হাতের ১০ আঙ্গুলের ছাপ দিতে হবে। এ ছাড়া আইরিশ বা চোখের মনির ছবিও দিতে হবে ভোটারকে।

স্মার্টকার্ডে প্রায় ২৫ ধরনের নাগরিক সেবা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে ই-পাসপোর্ট এবং ইমিগ্রেশন সেবাসহ বহুবিধ কাজে এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে। এই কার্ড এতই বহুবিধ কাজে ব্যবহার করা যাবে যে, তা এখন ধারণাই করা যাচ্ছে না। এটি পৃথিবীর যেকোনো দেশের স্মার্টকার্ডের চেয়ে বেশি মেমোরি বা তথ্য ধারণক্ষমতাস¤পন্ন কার্ড বলেও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।

সুত্র জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র হিসেবে স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য ফ্রান্সের ‘অবার্থুর টেকনোলজিস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি করে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন-জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালের জুনের মধ্যে ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড দেয়ার পরিকল্পনা ছিল নির্বাচন কমিশনের। সঙ্গত কারণে ওই সময়ে বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।

সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ১৫ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ছবিসহ ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে ৯ কোটি ২২ লাখের মতো মানুষের। এই স্মার্টকার্ড নিয়ে সবার মধ্যেই আছে নানা কৌতুহল। দেখতে কেমন হবে, কী কী কাজে লাগবে ইত্যাদি।

এখানে তিন স্তরে ২৫টির মতো নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রথম স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য খালি চোখে দেখা যাবে, দ্বিতীয় স্তরের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার জন্য প্রয়োজন হবে বহনযোগ্য যন্ত্রাংশ এবং শেষ স্তরের জন্য কোনো ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক টেস্ট করার প্রয়োজন হবে। এটিকে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার জন্য আটটি আন্তর্জাতিক সনদপত্র ও মানপত্র নিশ্চিত করা হবে বলে সুত্র জানায়।

স্মার্টকার্ড এর বিস্তারিত :
জালিয়াতি রোধে জাতীয় পরিচয়পত্রকে আধুনিকভাবে তৈরি, যন্ত্রে পাঠযোগ্য জাতীয় পরিচয়পত্রকেই ‘স্মার্টকার্ড’ বলে। একে ভোটার আইডি বলেও অভিহিত করা হয়। বর্তমানে যে পরিচয়পত্র বা কার্ড চালু রয়েছে তা সাধারণ পাতলা কাগজে প্রিন্ট করে লেমিনেটিং করা। যার প্রথম পৃষ্ঠায় নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ ও আইডি নম্বর এবং অপর পৃষ্ঠায় ঠিকানা দেওয়া। ফলে এই কার্ডটি সহজেই নকল করা সম্ভব। অসাধু ব্যক্তিরা এটি সহজেই নকল করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে।

নাগরিক ভোগান্তি ও হয়রানি রোধ করতেই স্মার্টকার্ড তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। এটি যন্ত্রে পাঠযোগ্য। অসাধু ব্যক্তিরা সহজেই নকল করতে পারবে না। ভোটারের বা পরিচয়পত্রধারীর আইডি নম্বর ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য এই আইডিতে সংরক্ষিত থাকবে। শুধুমাত্র যন্ত্রের সাহায্যে এসব তথ্য পাঠ করা যাবে। টেকসই ও সুন্দর অবয়বে এ কার্ড বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় তা সাধারণভাবে স্মার্টকার্ড হিসেবেই বিবেচিত হবে। দেশের সব নাগরিকের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতেই নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি চালাচ্ছেন।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, স্মার্টকার্ড হবে মেশিন রিডেবল, যা কার্ড জালিয়াতির হাত থেকে বাড়তি নিরাপত্তা প্রদান করবে। পরপর দুবার হারালেই কার্ড সংগ্রহে ভোটারকে জরিমানা দিতে হবে দুই থেকে চার হাজার টাকা।

বর্তমানে ভোটারদের কাছে বিদ্যমান লেমিনেটেড ন্যাশনাল আইডি কার্ড ফেরত নিয়ে প্রথমবারের মত প্রায় দুইশ টাকা মূল্যের স্মার্টকার্ড বিনামূল্যে বিতরণের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরপর পুনরায় মেশিনে পাঠযোগ্য এই কার্ড পেতে চাইলে একটি নির্দিষ্ট ফি দিতে হবে। কার্ডের মেয়াদ অন্তত ১০ বছর হবে। এরপর কার্ড নবায়নের জন্য সম্ভাব্য ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে (সাধারণ) ২৫০ টাকা। আর জরুরি ভিত্তিতে প্রদানের জন্য ফি থাকছে ৫০০ টাকা। অন্যদিকে হারানো বা নষ্ট কার্ড উত্তোলনে প্রথমবারের ফি থাকছে (সাধারণ) ৫০০ টাকা। আর জরুরি ভিত্তিতে প্রদানের জন্য ফি এক হাজার টাকা। দ্বিতীয়বার হারালে ফি ধরা হয়েছে (সাধারণ) এক হাজার টাকা। আর জরুরি ভিত্তিতে প্রদানের জন্য দুই হাজার টাকা।

এ ছাড়া দ্বিতীয়বারের পর কার্ড হারালে বা নষ্ট হলে ভোটারকে জরিমানা বা ফি দিতে হবে (সাধারণ) দুই হাজার টাকা। আর জরুরি ভিত্তিতে প্রদানের জন্য চার হাজার টাকা। এসব ফি ইসি সচিব বরাবর পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে দেওয়া যাবে।

জানা গেছে, বিভিন্ন পাবলিক সার্ভিস নিতে এই আইডি কার্ড প্রদর্শন আবশ্যক করার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। এরই মধ্যে ভোটারদের উন্নত মানের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার আগে বিদ্যমান জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন সেনাবাহিনীর সহায়তায় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের কাজ শুরু করে। দেশের সব নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিধান রেখে গত বছর ৬ অক্টোবর ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) বিল, ২০১৩’ সংসদে পাস হয়। এর ফলে ১৮ বছরের কম বয়সীরাও জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন। এদিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ ও গোপনীয়তা রক্ষার বিধান রাখা হয়েছে বিলে। কোনো ব্যক্তি বা নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিনা অনুমতিতে ভোটার তালিকা বা জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত তথ্য বা উপাত্তের বিষয়ে গোপনীয়তা লঙ্ঘন করলে শাস্তি থাকছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।

উল্লেখ্য, হালনাগাদ বাদে কক্সবাজার জেলায় বিদ্যমান ভোটার সংখ্যা ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৩৯ জন। সেখানে পুরুষ ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৫২৩ এবং মহিলা ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৯১৬ জন। আগের ভোটারের সঙ্গে ২৫ জুলাই থেকে হালনাগাদ হওয়া নতুন ভোটাররা যুক্ত হবে। মোট ভোটারের সাড়ে ৩ ভাগ নতুন ছবিযুক্ত ভোটার তালিকায় স্থান পাবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!