পিএসসি পরীক্ষায় নাতীর সাথে নানি
প্রতিদিন ডেস্ক : ময়মনসিংহের ত্রিশালে সুন্দরী বেগম (৬৫) নামে বৃদ্ধা মহিলা তার নাতীর সাথে পিএসসি সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। সুন্দরী বেগম ত্রিশালের হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা গ্রামের বর্ঘাচাষি কৃষক আবুল হোসেনের স্ত্রী।
ওই দম্পতির চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে একজন সৌদি প্রবাসী, দুজন ভ্যানচালক ও শুধুমাত্র ছোট ছেলে সাইদুল ইসলাম এইচএসসি পাশ।
সোমবার (২০ নভেম্বর) ত্রিশালের চাউলাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ৩৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৫ বছর বয়সী সুন্দরী বেগমও মনযোগ সহকারে লেখায় ব্যস্ত রয়েছেন। ত্রিশাল উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি সমাপনী পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী ২৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দরী বেগমও অংশগ্রহণ করেছেন।
সুন্দরী বেগম জানান, ৬ বছর আগে সুন্দরী বেগমের ছেলেদের উপার্জনের টাকা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কাশিগঞ্জ শাখায় একাউন্ট খুলতে যান। নিরক্ষর সুন্দরী বেগম কোন রকম স্বাক্ষর শিখেছিলেন। তিনটি স্বাক্ষরের মধ্যে একটি স্বাক্ষর ভুল হওয়ায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ফাইলটি সুন্দরী বেগমের মুখে ছুঁড়ে মারেন। কেঁদে কেঁদে বাড়ি ফিরে তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন যে কোন মূল্যে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে তিনি বেড়িয়ে আসবেন।
পরদিন মেয়ের ঘরের নাতী জিহাদকে নিয়ে সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে ভর্তি হন ১ম শ্রেণিতে। ধাত্রীর কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন নিয়মিত স্কুলে ক্লাস করতেন তিনি। ৬ বছর পরিশ্রমের পর এ বছর তিনি নাতী জায়েদের সাথে পিএসসি পরিক্ষায় অংশ নিয়েছি। নাতীর বয়সী সকল শিক্ষার্থী-শিক্ষকের উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। পিএসসি সমাপনী পরিক্ষায় অংশ নিয়ে খুব ভাল লাগছে বলে জানান তিনি।
সাউথকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, আমার শিক্ষকতা জীবনে এমন বিরল দৃষ্টান্ত আর দেখি নি। এই বয়সে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করে সুন্দরী বেগম নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বেরিয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার কোন বয়স নেই, এটাই প্রমাণ করলেন সুন্দরী বেগম। তাকে আমি স্যালুট জানাই। তার মতো অজ্ঞতা থেকে ফিরে আসুক সবাই। তাহলেই দেশের উন্নতি হবে।
