মা-ছেলেকে খুনের পর লুকিয়ে ছিল পাহাড়ে, চট্টগ্রামে এসেই র‌্যাবের জালে

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ের জোড়া খুনের এজহারভুক্ত একমাত্র আসামি মো. ফারুক খুন করে সেই রাতেই পালিয়ে গিয়েছিল পাবর্ত্য জেলা খাগড়াছড়িতে। সেখানে গিয়ে ওয়ার্কশপে কাজ নেয়। কয়েকদিন কাজ করার পর খরচের সাথে আয়ের ব্যবধান দেখে পাড়ি জমায় রাজধানী ঢাকায়। ঢাকাতেও তার পুষাচ্ছিল না। ফিরে আসে জন্মস্থান চট্টগ্রাম। কিন্তু চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের পর থেকেই র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি তার সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরছিল। শেষ পর্যন্ত র‌্যারের হাতে ধরা পড়ে খুনী ফারুক।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৪টায় ফারুক ঢাকা থেকে আকবরশাহ থানার পাক্কারমাথা এলাকায় এসে অবস্থান নিলে র‌্যাবের একটি দল তাকে আটক করে বলে জানান র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল। তিনি দুপুর ১টায় র‌্যাব চান্দগাঁও কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল খুনের দায় স্বীকার করা ফারুকের বরাতে জানান, ব্যবসা নিয়ে গুলনাহার বেগমের সাথে তার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই ফারুক গুলনাহারকে খুন করে। আর নয় বছরের শিশু রিফাত তা দেখে ফেলায় তাকেও খুন করা হয়। খুনে ধারালো ছুরি ব্যবহার করেছিল।

প্রায় ৩৭ দিন দেরিতে খুনীকে আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুরু থেকেই র‌্যাবের একটি দল খুনীর অবস্থান শনাক্তে কাজ করেছে। খুনীও বাঁচার অনেক কৌশল অবলম্বন করেছে। কিন্তু খুনী আমাদের ট্রেকিংয়েই ছিল। আরও আগেই তাকে আটক করা যেতো। কিন্তু সে পাহাড় থেকে সরে গিয়ে রাজধানীতে ক্ষণে ক্ষণে তার অবস্থান বদলেছে। আবার আমাদের দৃষ্টির আড়ালও হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় চান্দগাঁও ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের বিপরীতে রমজান আলী সেরেস্তাদারের বাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া গুলনাহার বেগম ও তার ছেলে রিফাতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট আলামত সংগ্রহ শেষে দেখা যায়, গুলনাহার বেগমের পুরো শরীরজুড়ে ধারালো ছুরির ১৮টি আঘাত ছিল। পেটের বামপাশে করা দুটি আঘাতের স্থানে শরীর থেকে বেরিয়ে আসছিল নাড়িভুঁড়ি। বাকি আঘাতগুলো দুই উরু, তলপেট আর হাতে।

এদিকে, তদন্ত সম্পৃক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, খুনির হাত থেকে জীবন বাঁচাতে প্রাণপণ লড়েছেন গুলনাহার বেগম (৩৩)। আর মায়ের হত্যাকাণ্ড দেখে ফেলায় তার মাত্র দুই ফুট দূরত্বে পড়ে ছিল ৯ বছরের শিশু রিফাতের লাশও। মায়ের লাশ বাথরুমের ভেতরে, রিফাতের লাশটি দরজার সাথে লাগোয়া বেসিনে উপুড় হয়ে পড়ে ছিল। শিশু রিফাতের কণ্ঠনালী কেটে ফেলা হয়েছে। তার হাতেও ছুরির দুটি কাটা দাগ ছিল।

খুনের দায় স্বীকার করা ফারুক বহদ্দারহাট খাজারোড়ের সিরাজ কসাইয়ের ছেলে। তার সাথে গুলনাহার বেগমের পাতানো ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিল। পেশায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি ফারুক অবসর সময়ে গুলনাহারের বানানো নাস্তা বিক্রি করতো। লকডাউনের সময়েই একইভাবে বিরিয়ানি বিক্রি করছিল ফারুক। ফারুক বিভিন্ন সময়ে টাকার লেনদেন নিয়ে গুলনাহারকে হত্যার হুমকি দিতো। হুমকিতে ভারতীয় টিভি ক্রাইম সিরিয়াল সিআইসির স্টাইলে খুন করার হুমকিও দিয়েছিল।

গুলনাহারের মেয়ে ময়ূরী (১৯) আজিম গ্রুপের গার্মেন্টসে চাকুরি করেন। ময়ুরীর পিতা আরেক বিয়ে করে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে থাকেন। ময়ুরীর দুই ভাইয়ের একজন ছিল রিফাত, আরেকজন বাপের সাথে গ্রামে থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে ময়ূরী বলেন, ফারুক আমাদের ভালো চলা দেখতে পারতো না। সে আমাদেরকে বলতো, ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়াল সিআইডির মতো করে খুন করে লাশ প্যাকেট করে নোয়াখালী পাঠাই দেবো। ময়ূরীর নানার বাড়ি চকবাজার থানার ঘাসিয়াপাড়া এলাকায়। মা-ভাইয়ের খুনের পর তিনি তার খালা রোজী আক্তারের সাথে থাকেন।

ফারুককে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে দুই রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করে র‌্যাব। তার বিরুদ্ধে র‌্যাব বাদি হয়ে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান র‌্যাবের সহকারী পরিচালক ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তারেক আজিজ।

এফএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!