হালিশহরের ঘটনা জেনে হাইকোর্টও অবাক, মামলার নথিপত্র তলব

এখন থেকে ঠিক দেড় বছর আগের কথা। চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর ফইল্ল্যাতলী বাজার খালপাড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে পোড়া মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হালিশহর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করার পর গ্রেপ্তার হন দুর্জয় আচার্য্য ও জীবন চক্রবর্তী নামের দুই যুবক। ‘হত্যার দায়’ স্বীকার করে এর পাঁচদিন পর চট্টগ্রামের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার হওয়া জীবন চক্রবর্তী জানান, পোড়া ওই মরদেহ তাদের সহকর্মী দিলীপের। তাকে ও দুর্জয়কে মারধরের প্রতিশোধ নিতে তারা দিলীপকে হালিশহরের নাথপাড়া এলাকায় হত্যা করে। পরে ফইল্ল্যাতলী খালপাড় এলাকার পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে মরদেহ নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহটি পুড়িয়ে ফেলে।

সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু গত বছরের ২১ এপ্রিল স্বীকারোক্তিমূলক এই জবানবন্দি দেওয়ার কয়েকদিন পর ‘হত্যার শিকার’ দিলীপকে চট্টগ্রামের একই আদালতে হাজির করান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সেই মামলা চলতে থাকে ঢিমেতালে।

এদিকে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি ওই মামলার আরেক আসামি দুর্জয় আচার্য্য হাইকোর্টে জামিন চাইতে গেলে ‘মৃত ব্যক্তির জীবিত ফিরে আসা’র মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনার কথা শুনে আদালতও অবাক হয়ে যান।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ওঠা সেই শুনানিতে এমন অবাক করা ঘটনার কথা বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আসার পর আদালত হাইকোর্ট মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সাইফুল্লাহকে তলব করেছেন। মামলার কেস ডকেট (নথিপত্র) নিয়ে ২২ অক্টোবর আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে তাকে। অন্যদিকে ‘আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার’ সেই দিলীপকেও সেদিন আদালতে উপস্থিত করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম কারাগারে থাকা দুই আসামি জীবন চক্রবর্তী ও দুর্জয় আচার্য্যকে সেদিন আদালতে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

‘নিহত’ বলে কথিত দিলীপ, ‘খুনে জড়িত’ জীবন ও দুর্জয় তিনজনই চট্টগ্রামের জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানা শ্রমিক।

গত বছরের ২৭ এপ্রিল সংবাদমাধ্যমকে সিএমপির ডবলমুরিং জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার আশিকুর রহমান বলেছিলেন, ‘পোড়া মরদেহের পরিচয় পেয়েছি আমরা। দিলীপ নামে ওই কিশোর কুমিরা এলাকায় জিপিএইচ ইস্পাত কারাখানার শ্রমিক। জীবন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। জীবন জবানবন্দিতে জানিয়েছে দিলীপ হত্যার কিছুদিন আগে জীবন ও দুর্জয়কে গালিগালাজ করে। পরে এর রেশ ধরে তাদেরকে মারধরও করে। মারধরের প্রতিশোধ নিতে দিলীপকে পরিকল্পনা করে হত্যা করে তারা দুইজন।’

ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানিয়েছিলেন, ‘১৮ এপ্রিল তারা দিলীপকে নাথপাড়া এলাকায় হত্যা করে। পরে ফইল্ল্যাতলী খালপাড় এলাকার পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে মরদেহ নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহটি পুড়িয়ে ফেলে। এজন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী হালিশহর বড়পোল এলাকা থেকে কেরোসিন কেনেন জীবন ও দুর্জয়।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!