প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তানের উইকেটবিহীন প্রথম সেশন

সবার চোখ এখন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে

বাংলাদেশের সাথে একমাত্র টেস্টের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার জন্য বিসিবি একাদশের বিপক্ষে দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নামে আফগানিস্তান। আর তাতে দুর্দান্ত শুরু করে নিজেদের ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান। সকালে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খান। দলীয় অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করে প্রথম দিনের প্রথম সেশনে কোন উইকেট পড়তে দেননি দু উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইহসানুল্লাহ জানাত ও ইবরাহিম জাদরান। মধ্যহ্ন ভোজের আগে এ দুজন ২৬ ওভারে তুলে নেন ৭৭ রান। এরমধ্যে জানাত অপরাজিত আছেন ৩৭ রানে (৮২ বলে, ৬টি চারের সাহায্যে) এবং জাদরান ৩০ রানে (৭৯বলে, ৪টি চারের সাহায্যে)। এ দুজনকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ছয়জন বোলার ব্যবহার করেও সফল হতে পারেননি বিসিবি একাদশের অধিনায়ক সোহান।

অনুশীলন ম্যাচ হলেও বিসিবি ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবার চোখ এখন এম এ আজিজে। আসলে টেস্টে আফগানরা কেমন দল? তাদের অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন এবং পারফরমেন্স কেমন?- তার অনেকটাই অজানা। বিসিবি একাদশের সঙ্গে দু’দিনের ম্যাচেই জানা যাবে দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে আফগানরা আসলে কেমন ধরনের দল? আর তাই সকাল থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগী, ভক্ত-সমর্থকদের দৃষ্টি এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে।

আফগানরা সীমিত ওভারের ফরম্যাটে কেমন দল?- সে ধারণা কম বেশি সবারই আছে। ওয়ানডেতে চলনসই, তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের উপযোগী দল। যাদের কিছু ‘এক্সাইটিং’ ক্রিকেটার আছেন। যারা ৫০ ওভারের চেয়েও ২০ ওভারের ম্যাচে বেশি কার্যকর। ৫০ ওভারের ম্যাচের চেয়েও টি-টোয়েন্টিতে মারকুটে দল আফগানিস্তান। ভয়-ডরহীন এবং বেশ সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী ডাকাবুকো কয়েকজন ক্রিকেটার আছেন, যারা যেকোন উইকেটে হাত খুলে খেলার চেস্টা করেন। ভাল বল আর খারাপ বলের ‘থোরাই কেয়ার’ করেন। আর আলগা বল পেলে তো কথাই নেই। দুম করে যাকে তাকে বিগ হিট হাঁকিয়ে বসেন।

খুব উঁচু মানের কোয়ালিটি ফাস্ট বোলার না থাকলেও জোরে বল করতে পারেন কয়েকজন পেসার। রশিদ খানের মত সময়ের সেরা লেগস্পিনারও আছেন। যেখানে বল এক সুঁতোও ঘোরে না, সেখানেও বল লাটিমের মত ঘুরিয়ে ব্যাটসম্যানের নাভিশ্বাষ তুলে ছাড়েন। মোহাম্মদ নবী আর মুজিব উর রহমানরাও কম যান না। সব মিলে টি-টোয়েন্টি আর ৫০ ওভারের ফরম্যাটে আফগানরা হেলা ফেলার দল না।

কিন্তু টেস্টের আফগানিস্তান অনেকটাই অপরিচিত। টেস্টে তাদের শক্তি এখনও পরিক্ষীত হয়নি। সাকুল্যে খেলেছেই মাত্র দুইটি টেস্ট। যেখানে জয়-পরাজয় একটি করে। কাজেই আফগানরা সীমিত ওভারের ফরম্যাটের মত টেস্টেও দল হিসেবে মন্দ না- এমন কথা বলার মত অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি।

আর সেখানে বাংলাদেশ ১৯ বছরের টেস্ট যুবা। ঠিক যতটা সুগঠিত, সু স্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়ার কথা ছিল, ততখানি না হলেও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে টাইগাররা। তাই সব হিসেবেই টেস্টে গুলবাদিন, নবী, রশিদ খানদের চেয়ে সাকিব, মুশফিকরা সমৃদ্ধ, পরিণত, অভিজ্ঞ এবং সর্বোপরি ফেবারিট।

স্বাভাবিক হিসেবে আফগানদের সঙ্গে বাংলাদেশের টেস্ট জয়টাই প্রত্যাশিত। এককথায় টেস্টে আফগানদের সঙ্গে বাংলাদেশের জেতাটাই স্বাভাবিক ঘটনা বলে পরিগণিত হবে। বিপরীতে হার বা ড্র’ই হতে পারে বড় ঘটনা। সেটা বরং ব্যর্থতা বলেই ধরা হবে।

আসলে আফগানরা টেস্টে বা দীর্ঘ পরিসরের ফরম্যাটে কেমন দল? তাদের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচটা কেমন? সীমিত ওভারের মতই মারকুটে নাকি টেস্টের চিরায়ত ধারা অনুযায়ী? তাদের পেস বোলাররা দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট উপযোগী বোলিং বিশেষ করে অফস্টাম্পের আশপাশে ভাল লেন্থে বল ফেলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য্য পরীক্ষা নিতে পারেন কি-না? সীমিত ওভারের খেলার পুরোটা জুড়েই ব্যাটসম্যানদের রান করার তাড়া থাকে। যে কারণে ঝুঁকি নিয়ে হলেও শটস খেলার প্রবণতা থাকে বেশি।

এছাড়া আফগান স্পিনাররা সীমিত ওভারের ক্রিকেটের মত টাইট বোলিং করে উইকেট নেয়ায় দক্ষ। কিন্তু টেস্টে তো প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের অমন তেড়েফুঁড়ে শটস খেলা আর রান করার তাড়া থাকে না। সেখানে দীর্ঘ স্পেলে ব্যাটসম্যানের রক্ষণাত্মক ও সতর্ক-সাবধানি অ্যাপ্রোচ ভেদ করে আফগান বোলাররা কতটা কার্যকর ও পারদর্শি- তা অনেকটাই অজানা ও অদেখা।

আজ শুরু হওয়া বিসিবি একাদশের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচেই সে সম্পর্কে পূর্ব ধারণা জন্মাবে। আর সে কারণেই বিসিবি একাদশের বিপক্ষে এই দু দিনের ম্যাচটি পাখির চোখে পরখ করতে আগে ভাগে চট্টগ্রাম গেছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। আফগানরা আসলে টেস্টে কেমন দল? ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ কেমন? সত্যিকার টেস্ট মেজাজের ব্যাটসম্যান আছেন কজন? বোলিং শক্তি কতটা কার্যকর- এসব ধারণা মিলবে এই দু দিনের ম্যাচেই।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!