সড়ক দখল করে কদমতলীতে ট্রাক স্ট্যান্ড, ফুটপাতে হাঁটার উপায় নেই

চট্টগ্রাম নগরীর কদমতলীর ফলমন্ডি এলাকার প্রবেশপথে সড়কের উপর গড়ে উঠেছে অবৈধ ট্রাক ও পিকআপ স্ট্যান্ড। ফুটপাত দখল করে রাখা হয়েছে ফলের খালি ঝুড়ি (ফল ব্যবসায়ীদের ভাষায় ক্যারেট)। এতে ফলমন্ডি এলাকায় অনাকাঙ্খিত যানজটে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শনিবার (৩১ আগস্ট) ফলমন্ডি বাজারে প্রবেশের মুখে বসুধা বিল্ডার্স মার্কেটের সামনে সড়কের উপর গড়ে উঠেছে অবৈধ ট্রাক ও পিকআপ স্ট্যান্ড। এছাড়া সড়কের উপর রিকশা, অটোরিকশার স্ট্যান্ড।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যস্ততম এই ফলের বাজারের সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় যানজট থাকে। ট্রাক স্ট্যান্ডের শ্রমিক নেতা ও চালকদের কাছে ফলের ক্রেতা ও ফলমন্ডির ব্যবসায়ীরা জিম্মি। ফলমন্ডি বাজারে প্রায় আড়াইশ দোকান রয়েছে। দৈনিক ১০-১৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এখানে পুরো চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা পাইকারি দরে ফল কিনতে আসেন। কেনা ফল বহনের জন্য স্ট্যান্ড ছাড়া বাইরে থেকে ট্রাক ও পিকআপ ভাড়া করতে গেলে ঝামেলায় পড়তে হয়।

এখানে অন্য গাড়ির তুলনায় ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ। তবুও এখান থেকেই ভাড়া করতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা। শ্রমিক নেতা ও সিন্ডিকেটের কারণে বাইরের গাড়িতে করে ফল বহন করতে বাধা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা মিলে একাধিকবার প্রশাসনকে অভিযোগ করলেও স্থায়ী কোন প্রতিকার পাইনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা শ্রমিক নেতা ওই সিন্ডিকেটের কাছে অসহায়। প্রশাসনকে একাধিকবার বললে সাময়িক ব্যবস্থা নেয়। স্থায়ী কিছু হয় না।’

পথচারীরা জানান, ফোর স্টার ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে ফলমন্ডির প্রবেশ পথ পর্যন্ত প্রায় একশ গজ এলাকার ফুটপাত দখল করে রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার কলোনির ফলের ঝুড়ির ব্যবসায়ী ‘জনৈক রাজা’ হাজার হাজার ফলের খালি ঝুড়ি রেখে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন।

ফল ব্যবসায়ীরা বলেন, আমের মৌসুমে উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, মেহেরপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গাসহ নানা জেলা থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে আম আসে । ব্যবসায়ীরা আম বিক্রয়ের পর ঝুড়িগুলো স্থানীয় খুচরা ঝুড়ি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। এসব ব্যবসায়ীরা তা কিনে ফুটপাতসহ নানা স্থানে মজুদ করে রাখেন। আমের মৌসুমে ব্যবসায়ীরা তা আবারো কিনে নিয়ে যান। এতে প্রায় সারা বছর খালি আমের ঝুড়িগুলো ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে মজুদ করে রাখে। এছাড়া ফুটপাতে রিকশার গ্যারেজ, সন্ধ্যাকালীন উত্তরবঙ্গের বাস টিকিট কাউণ্টার ও সন্ধ্যা থেকে চেয়ার ও টেবিল নিয়ে টিকিট বিক্রেতারা ফুটপাত দখল করে বসে পড়েন। ফলে সাধারণ মানুষেক মুল সড়কের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে বাধ্য হয়। এছাড়া মাদকাসক্তদের উৎপাত ও ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে।

বাসচালক রহিম বলেন, সড়কের উপর ট্রাক স্ট্যান্ড ও মালামাল উঠানামার ফলে আমাদের জ্যামে আটকে থাকতে হয়। এছাড়া ফুটপাত দখল করে আমের ঝুড়ি রাখার কারণে মানুষ মূল সড়কে চলাচল করেন। এতে সামান্য জায়গা অতিক্রম করতে ২০ -৩০ মিনিট সময় লাগে।

পথচারী রেজওয়ান জানালেন, এই সড়কে ঝুকিঁ নিয়ে চলাফেরা করি। ট্রাক স্ট্যান্ড, ফুটপাত দখল, মাদকাসক্তদের আড্ডা, ছিনতাই এগুলোতো আছেই। আমাদের দুর্ভোগেরতো শেষ নেই।

ফলমন্ডি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মালেক সওদাগর বলেন, ট্রাক স্ট্যান্ডের ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে অনেকবার বলেছি। প্রশাসন পদক্ষেপ নিলে কিছুদিন পর আবার বসে যায়। এদের কাছে আমরা অসহায়। এখানে অনেক নেতার হাত রয়েছে।

জানতে চাইলে ডিসি ট্রাফিক ( উত্তর) হারুণ উর রশিদ হাজারী বলেন, ‘ফলমন্ডির দোকানগুলোর ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার সময় সিটি কর্পোরেশনের পার্কিংয়ের জায়গা দেখা উচিত। ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে অথচ পার্কিং নিশ্চিত করে না। ফলে সড়কে মাল উঠানামা করছে।’

সিএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!