পটিয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার ১০ দিন পর বাতিল

চট্টগ্রামের পটিয়ার বড়লিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এডহক কমিটি ঘোষণার ১০ দিনের মাথায় বাতিল করা হয়েছে। কমিটি গঠনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদকে অধ্যাপক হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ আনা হয়।

কমিটি ঘোষণার পর এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বড়লিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা।

জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় জেলা উপজেলা, ইউনিয়ন ওয়ার্ড, ইউনিট কমিটি কেন্দ্রের অনুমতিবিহীন বিলুপ্ত না করার নির্দেশনা দেন। যদিও কোন কারণে কমিটি ভাঙার প্রয়োজন হয় কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশনা রয়েছ। এই ক্ষেত্রে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশীদ কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে গত ১১ মার্চ উজ্জল চৌধুরী চন্দনকে সভাপতি ও ইউনুচ তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ জনের বড়লিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এডহক কমিটি অনুমোদন দেন। এ নিয়ে বড়লিয়া ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

নেতা কর্মীদের অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বিরুদ্ধে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাইব্রীড নেতাকে চেয়ারম্যান পদে বসাতে অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে দলের হাইকমান্ডকে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হয়। এ অভযোগের প্রেক্ষিতে গত ২১ মার্চ পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একটি চিঠির মাধ্যমে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বড়লিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আগের কমিটি বহাল রাখার নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সভাপতি সুপ্রিয় বড়ুয়াকে সভাপতি মোরশেদ আলম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০০৯ সালে কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০১৫ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে পূনরায় আগের কমিটি নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের সুপ্রিয় বড়ুয়াকে সভাপতি ও ইউনুছ তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি পূর্ণগঠন করা হয়। হঠাৎ কোন কারণ ছাড়াই গত ১১ মার্চ উজ্জ্বল চৌধুরী চন্দনকে সভাপতি ও ইউনুছ তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করলে কমিটি দিলে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়।

এ ব্যাপারে বড়লিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, আমাকে কোন কারণ ছাড়াই বাদ দিয়ে অবৈধভাবে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, বিষয়টি দক্ষিণ জেলা আমি জানানোর পর তারা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আগের কমিটি বহাল রাখার নির্দেশ দেন। বিষয়টি আমি প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলের সাধারণ সম্পাদকের নিকট অভিযোগ করবো।

বড়লিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুছ তালুকদার বলেন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের চিঠি দেয়ার বিষয়ে কিছু জানি না। তবে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আমাদের তদারকি করতে পারেন না।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগের যে কোন পর্যায়ের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দিতে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা মানতে হবে। বড়লিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা দিয়ে পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অমান্য করেছেন। তাই পূর্বের কমিটি বহাল রাখার জন্য এবং নতুন কমিটি বাতিল করে একটা চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিড নেতাদের সাথে আঁতাত করে দলের মূল ধারার নেতাদের বাদ দিয়ে কমিটি করাতে আমরা জেলা আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়েছি পূর্বের কমিটি বহাল রাখতে। সাথে এও বলেছি নতুন কমিটি করতে হলে সন্মেলনের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষ ভোটে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা মোতাবেক করার জন্য।

পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, যেহেতু এলাকাটি উপজেলা সভাপতির নিজের এলাকা কমিটির বিষয় এবং দক্ষিণ জেলা কি সিদ্ধান্ত দিয়েছে তিনি ভাল বলতে পারবেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরীকে মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করে কথা না সংযোগ কেটে দেয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!