উগ্র রোহিঙ্গাদের আগুনের বলি ১১ প্রাণ, বাড়ি পুড়ে ছাই ১৫ হাজার

আগুন লাগিয়ে দেয়ার সময় ধরা ৬ রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ৯ হাজার ৩০০ পরিবারের আনুমানিক ৪৫ হাজার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আগুনের লেলিহান থেকে রক্ষা হয়নি ৩ শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দার বসত বাড়ি। এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন।

ভস্মিভূত রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারে সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসিন।

তিনি ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ৫০ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্ধ দেয়ার কথা বলেন। এছাড়াও স্থানীয়দের জন্য নগদ টাকা, চাল, তালিকা পাওয়া গেলে ঘর করে দেওয়া হবে বলেও জানান।

আন্তর্জাতিক অভিভাবসন সংস্থা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় ৪০০ জনের অধিক নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও সাড়ে ৫০০ নারী-পুরুষ ও শিশু আহত হয়েছে। তবে এ পরিসংখ্যান পরিবর্তন হতে পারে।

এদিকে, নিহত ১১ জন রোহিঙ্গার পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। তারা হলেন- সলিম উল্লাহ (৫৫), রফিক আলম (২৫), আবদুল্লাহ (৮), আসমাউল (৭), মিজানুর রহমান (৪), বশির আহমদ (৭৯), খতিজা বেগম (৭২), মো. একরাম (৩), এমদাদ উল্লাহ (২৪), তসলিমা (৪), মোশারসা (৩)।

মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লেগে আনুমানিক ১৫ হাজারের বেশি বাড়িঘরসহ, মসজিদ, ১৩৬ লার্ণিং সেন্টার, দোকানপাট, হাসপাতাল ও এনজিওর ভবন পুড়ে গেছে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আগুনের এ ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া ৩ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা পরিবার সকাল থেকে দলে দলে পুরানো ঠিকানায় ফিরতে দেখা গেছে। অনেকেই কাঠ, বাস, ত্রিপল দিয়ে নতুন ঘর তৈরির শুরু করেছেন।

ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় পালংখালী ইউনিয়নের ১, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৩ শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দার বাড়ি ঘর পুড়ে গেছে এমনটি জানিয়েছেন পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, উগ্র রোহিঙ্গাদের দেওয়া আগুনে পুড়েছে ক্যাম্প। গতকাল আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে ৬জনকে আটক করে ক্যাম্প প্রশাসনকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

স্থানীয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্য পারভীন আকতার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয় বাসিন্দাদের কিছু শুকনো খাবার ছাড়া কোনও ধরণের সহায়তা সামগ্রী দিতে পারেননি। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্থ মৌলভী নুরুল হকের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলেন, রোহিঙ্গাদের দেওয়া আগুনে সব পুড়ে ছারখার হয়ে হয়ে গেছে। এনজিওগুলো আমাদের সাথে চরম বৈষম্য করছে। গাড়িভর্তি করে সহায়তা সামগ্রী নিয়ে আসলেও আমাদের না দিয়ে সবকিছু রোহিঙ্গাদের দিচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গা আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের বাড়িঘর ও খাবারসহ সব পুড়ে গেছে। কাল থেকে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করেছি।

বালুখালী ৯ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা বশির আহমদ জানান, কাল থেকে জিয়াবুল হক নামে তার ৭ বছর বয়সী নাতীকে খুঁজে পাচ্ছে না। সকাল থেকে পানি ছাড়া কিছু জোটেনি।

ক্যাম্প-৯ এর সি ব্লকের সি-৫ এর বাসিন্দা মৌলভী মোস্তাক বলেন, আমার দুইটি দোকান এবং একটি ঘর পুড়ে গেছে। দোকানে ২৫ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে আমি সর্বহারা হয়ে গেছি।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ম্যানেজার মো. এমদাদুল হক জানিয়েছেন, ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৭জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি ও আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত শেষে জানা যাবে। এ ঘটনা তদন্তের জন্য ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. শামসু-দ্দৌজা জানান, ঘটনাস্থলে প্রশাসনের কয়েক স্তরের কর্মকর্তা উপস্থিত রয়েছে। তবে প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ১৫ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!