দেশে বছরে পালিত হবে ৮৫টি দিবস, জাতীয়ভাবে শুধু ১৮টি

সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে বছরে তিন ক্যাটাগরিতে পালিত হবে মোট ৮৫টি দিবস। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পর্যায়ে যেসব দিবস বা উৎসবসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে ১৮টি দিবস। অন্যদিকে ঐতিহ্যগতভাবে পালিত হবে ৩৪টি দিবস। আর বিশেষ প্রতীকী দিবস পালিত হবে ৩৩টি।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব মো. সাজ্জাদুল হাসান স্বাক্ষরিত নতুন প্রজ্ঞাপনের ৫নং ধারায় এসব দিবস পালনের ক্ষেত্রে ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপনটি বাতিল করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে পালিত দিবস ও ঐতিহ্যগতভাবে পালনযোগ্য দিবসের ক্ষেত্রে খরচ বাবদ সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা। এসব দিবস পালনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে বিশেষ প্রতীকী দিবস পালিত হবে সীমিত আকারে। এ জন্য সরকারি কোষাগার থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ করা হবে না।

জাতীয় পর্যায়ে ১৮টি দিবস
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে যে ১৮টি দিবস বা উৎসবসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে সেগুলো হচ্ছে— আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি। জাতির পিতার জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস ১৭ মার্চ। গণহত্যা দিবস ২৫ মার্চ। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ। মে দিবস ১ মে। বুদ্ধ পূর্ণিমা মে মাসে। শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী ৫ আগস্ট। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী ৮ আগস্ট। জাতীয় শোকদিবস ১৫ আগস্ট। বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর। বড়দিন ২৫ ডিসেম্বর। বাংলা নববর্ষ ১ বৈশাখ। রবীন্দ্রজয়ন্তী ২৫ বৈশাখ। নজরুলজয়ন্তী ১১ জ্যৈষ্ঠ। ঈদুল ফিতর ১ শাওয়াল। ঈদুল আজহা ১০ জিলহজ। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) ১২ রবিউল আউয়াল ও দুর্গাপূজা।

ঐতিহ্যগত ৩৪টি দিবস
ঐতিহ্যগতভাবে যে ৩৪টি দিবস পালিত হবে সেগুলো হচ্ছে— জাতীয় সমাজসেবা দিবস ২ জানুয়ারি। জাতীয় টিকা দিবস বছরের শুরুতে নির্ধারণযোগ্য। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ৫ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস ২৭ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় বিমা দিবস ১ মার্চ। জাতীয় ভোটার দিবস ২ মার্চ। জাতীয় পাট দিবস ৬ মার্চ। বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস ১৫ মার্চ। বিশ্ব আবহাওয়া দিবস ২৩ মার্চ। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস ৩ এপ্রিল। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দিবস ও জাতীয় ক্রীড়া দিবস ৬ এপ্রিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস ৭ এপ্রিল। মুজিবনগর দিবস ১৭ এপ্রিল। নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস ২৮ মে। জাতীয় চা দিবস ৪ জুন। বিশ্ব পরিবেশ দিবস ৫ জুন। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস ২৬ জুন। বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ১১ জুলাই। জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস ২৩ জুলাই। জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস ৯ আগস্ট। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ৮ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব নৌ দিবস সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। জাতীয় উৎপাদনশীলতা দিবস ২ অক্টোবর। শিশু অধিকার দিবস অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার। আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ১৩ অক্টোবর। বিশ্ব খাদ্য দিবস ১৬ অক্টোবর। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২২ অক্টোবর। জাতীয় যুব দিবস ১ নভেম্বর। জাতীয় সমবায় দিবস নভেম্বর মাসের প্রথম শনিবার। বিশ্ব এইডস দিবস ১ ডিসেম্বর। জাতীয় বস্ত্র দিবস ৪ ডিসেম্বর। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ৯ ডিসেম্বর। বেগম রোকেয়া দিবস ৯ ডিসেম্বর ও ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ১২ ডিসেম্বর।

বিশেষ খাতের ৩৩টি দিবস
বিশেষ খাতের যে ৩৩টি দিবস পালিত হবে সেগুলো হচ্ছে— বার্ষিক প্রশিক্ষণ দিবস ২৩ জানুয়ারি। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস ৬ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় ক্যান্সার দিবস ৪ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক নারী অধিকার ও আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস ৮ মার্চ। জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস ১০ মার্চ। বিশ্ব পানি দিবস ২২ মার্চ। বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস ২৪ মার্চ। বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২৬ এপ্রিল। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ২৮ এপ্রিল। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস ২৮ এপ্রিল। বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম দিবস ৩ মে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস ৮ মে। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ দিবস ১৫ মে। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ৩১ মে। বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ৯ জুন। বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস ১৭ জুন। আন্তর্জাতিক সমবায় দিবস জুলাই মাসের প্রথম শনিবার। আন্তর্জাতিক ওজোন সংরক্ষণ দিবস ১৬ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব পর্যটন দিবস ২৭ সেপ্টেম্বর। বিশ্ব হার্ট দিবস সেপ্টেম্বর মাসের চতুর্থ রবিবার। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস ১ অক্টোবর। বিশ্ব বসতি দিবস অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার। জাতীয় জন্মনিবন্ধন দিবস ৬ অক্টোবর। বিশ্ব ডাক দিবস ৯ অক্টোবর। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ১০ অক্টোবর। বিশ্ব সাদা ছড়ি দিবস অক্টোবর মাসে। জাতিসংঘ দিবস ২০ অক্টোবর। জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস ২ নভেম্বর। বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস ১৪ নভেম্বর। প্যালেস্টাইনি জনগণের প্রতি আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা দিবস ২৯ নভেম্বর। বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ১০ ডিসেম্বর। জাতীয় জীববৈচিত্র্য দিবস ২৯ ডিসেম্বর ও জাতীয় শিক্ষক দিবস পালিত হবে সুবিধাজনক দিনে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিক্ষা সপ্তাহ, প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ, বিজ্ঞান সপ্তাহ, বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ (১-৭ আগস্ট), বিশ্ব শিশু সপ্তাহ (২৯ সেপ্টেম্বর- ৫ অক্টোবর), সশস্ত্র বাহিনী দিবস (২১ নভেম্বর), পুলিশ সপ্তাহ, বিজিবি সপ্তাহ, মৎস্য পক্ষ, বৃক্ষরোপণ অভিযান, আনসার সপ্তাহ এবং জাতীয় ক্রীড়া সপ্তাহ পালনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

দিবস পালনে বিশেষ নির্দেশনা
সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জাতীয় দিবসসমূহ পালন ব্যতীত সাধারণ দিবস পালনের ক্ষেত্রে সাজসজ্জা পরিহার করতে হবে। বড় ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। তবে সীমিত আকারে সভা সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা যাবে। কোনও সপ্তাহ পালনের ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানসূচি সাধারণভাবে কিন্তু দিনের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। এসব দিবসের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে যাতে অফিসের কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত না ঘটে। ভালো হয় অফিস ছুটির পরে বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে করতে পারলে। নগদ কিংবা উপকরণ আকারে অর্থ বা সম্পদ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না এরূপ সাধারণ ইভেন্টসমূহ ছুটির দিনে কিংবা কার্যদিবসে আয়োজন করা যাবে। যেমন, রাষ্ট্রপতির বাণী, প্রধানমন্ত্রীর বাণী প্রচার, পতাকা উত্তোলন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ঘরোয়া আলোচনা সভা, বেতার ও টেলিভিশনে আলোচনা সভা, পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচার ইত্যাদি।

এছাড়াও দিবস পালনের ক্ষেত্রে কর্মদিবসে সমাবেশ বা শোভাযাত্রা পরিহার করতে হবে। কোন দিবস পালনে রাজধানীর বাইরে থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঢাকায় আনা যাবে না। দিবসগুলো পালনের ক্ষেত্রে এসব সিদ্ধান্ত পালনের জন্য সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!