চট্টগ্রামে সৌদিপ্রবাসী কর্মীদের অন্তহীন ভোগান্তি, ভিসা-আকামার মেয়াদ শেষ অনেকের

প্রবাসে ফিরতে গিয়ে বিড়ম্বনা, ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন সৌদি আরব প্রবাসী রেমিটেন্সযোদ্ধারা। কাকভোরে চট্টগ্রামের বিমান অফিসে লাইন ধরেও অনেকে পাচ্ছেন না কাঙ্খিত বিমান টিকিট। টিকিট পেয়ে কেউ কেউ রীতিমতো ‘সোনার হরিণ’ পাওয়ার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও ভিসার মেয়াদ ও আকামা (কাজের অনুমতিপত্র) শেষ হয়ে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করছেন অনেকেই। প্রাণের কর্মস্থলে ফেরা নিয়ে এভাবে নিদারুণ এক অনিশ্চয়তায় রয়েছেন বেশিরভাগ প্রবাসীই।

প্রবাসীদের অভিযোগ, ভিসা ও আকামের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি কেবল সরকারি ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ। বাস্তবচিত্র ভিন্ন হওয়ায় সৌদি যাত্রা ও কাজে যোগদানে অনিশ্চয়তায় পড়তে হচ্ছে তাদের।

চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরের বিমান অফিস ঘুরে দেখা গেছে, ফ্লাইট ও টিকিট সমস্যার জন্য ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও বিমান অফিসে ভিড় করছেন সৌদি থেকে এসে দেশে আটকেপড়া প্রবাসীরা। প্রতিদিন শত শত সৌদি প্রবাসীকে বিমান অফিসের সামনে জড়ো হতে দেখা যায়।

জানা গেছে, শুরুতে ছিল ফ্লাইট ও টিকেট নিয়ে চরম দুর্ভোগ। ওই সঙ্কট খানিকটা কমলেও এখন নতুন আপদ হয়ে এসেছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার সনদ নিয়ে জটিলতা। সেই সনদ হাতে পেতে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়। অথচ অনেক প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ। কাকতালীয়ভাবে তারাই বেশি পড়ছে এ জটিলতায়।

জানা গেছে, সৌদি আরব প্রবাসীদের জন্য পাঁচটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হচ্ছে সৌদি আরবের অনুমোদিত ১৮টি এজেন্সির মাধ্যমে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করতে হবে। সে দেশের নিয়োগকর্তার আনুষ্ঠানিক চিঠি সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়িত হতে হবে। এছাড়া রি-এন্ট্রি ভিসার মূল কপি, নিয়োগপত্রের কপি, সৌদি আরবের পাসপোর্ট অফিসের অনুমতিপত্রের কপি, সৌদি আরব থেকে বের হওয়ার তারিখসহ পাসপোর্ট পাতার কপি জমা দিতে হবে। এসব কাগজপত্র জোগাড় করতে সৌদি থেকে এসে আটকে যাওয়া প্রবাসীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে রীতিমতো।

সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) হাটহাজারীর বাসিন্দা মীর আহমদ ষোলশহরের বিমান অফিসে এসেছিলেন টিকিট সংগ্রহের জন্য। কিন্তু তিনি টিকিট বুকিং না দিয়েই ফিরে গেছেন। কারণ তিনি বিমান অফিসে এসেই জানতে পারেন কয়েকটি শর্তের কথা। বিষয়গুলো নিয়ে এখন তার সৌদি নিয়োগদাতার সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর আবার টিকিট করাবেন। তিনি বললেন, ‘সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যয়িত কপি আর পাসপোর্ট অফিসের কপি সংগ্রহ করা খুবই কষ্টকর হবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারেরই বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া দরকার— যেন প্রবাসীরা সহজে সৌদি আরবে পৌঁছতে পারে।’

বিমান অফিসের সামনে সাতকানিয়ার বাসিন্দা আমির হোসেন বললেন, ‘লকডাউনের আগে সৌদি আরব থেকে এসেছি। কিন্তু সৌদির ফ্লাইট চালু করেছে শুনে ভোরে বিমান অফিসে এলাম। কিন্তু টিকিট পেলেও এতোগুলো কাগজপত্র জোগাড় করা তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’

রাউজানের ইব্রাহিম বললেন, ‘আমার ভিসার মেয়াদ আগামী মাসের ১৫ তারিখে শেষ হবে। এসব বিষয়ে কপিলকে (নিয়োগকর্তা) বলেছি। কপিল বলেছে, আকামা সরকারি ওয়েবসাইটে গিয়ে রিনিউ করতে হয়। সেই ওয়েবসাইটও খুলছে না। আমি এখন কী করবো সেটি ভেবে পাচ্ছি না। ভিসা যদি না হয় আমরা যাবো কোথায়? কাজ কোথায় করবো?’

এদিকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা জমা দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সৌদি আরবে পৌঁছতে হবে— এটিও প্রবাসীদের জন্য নতুন আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার নমুনা পরীক্ষার পর সনদ পেয়ে এরপর বিমান ধরতে খুব কম সময় হাতে থাকছে।

প্রসঙ্গত, সৌদি আরব বাংলাদেশ বিমানকে ১ অক্টোবর থেকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। এ ঘোষণার পর থেকে প্রতিদিনই ঢাকার মতো চট্টগ্রাম বিমান অফিসেও ভিড় করছে চট্টগ্রামে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীরা। প্রতি মুহূর্তে নানা বিড়ম্বনা ও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।

চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কাসেম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ শতাধিক মানুষের ভীড় হয় বিমান অফিসে। আগেও টিকিট প্রত্যাশীদের হাতে বিমান অফিস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তাই ওখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!