দুর্নীতির অভিযোগ জাসদ নেতার, চ্যালেঞ্জ নিলেন আবদুচ ছালাম

গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) যত প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সেখানে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে প্রতিষ্ঠানটির বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও তার স্বজনদের ব্যাংক একাউন্ট যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইন্দু নন্দন দত্ত। তাদের ব্যাংক একাউন্ট যাচাইয়ের মাধ্যমেই এসব দুর্নীতির প্রমাণ মিলবে বলে দাবি ১৪ দলীয় এ নেতার।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে ‘চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’ আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে অংশ নিয়ে জাসদ নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত এই দাবি জানিয়েছেন। ছালামের নিজ এলাকার সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদলের নতুন দল বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইন্দু নন্দন দত্ত।

তবে একাউন্ট যাচাইয়ের এ আহ্বানকে ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়েছেন আবদুচ ছালাম। তিনি বলেছেন, গত ১০ বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নের টেন্ডারে ২০ টাকাও দুর্নীতি করা হয়নি তাই যে কোনও তদন্তের মুখোমুখি হতে ভয় নেই তার।

চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে ‘চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’ আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে ‘চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’ আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ

১৪ দলীয় জোট চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ নেতা ইন্দু নন্দন দত্ত আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে গত ১০ বছরে সিডিএ যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে, সবগুলোতে দুর্নীতি হয়েছে। সিডিএর সাবেক প্রধান ও তার স্বজনদের ব্যাংক একাউন্ট চেক করা দরকার। তাহলে অনেক কিছু বের হয়ে আসবে। চট্টগ্রামকে অপরিকল্পিত নগরে পরিণত করা হয়েছে। সর্ষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে আছে।’

২০০৯ সালে প্রথমবারের মত রাজনৈতিক বিবেচনায় নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক শিল্পপতি আবদুচ ছালামকে সিডিএ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তবে গত ১০ বছর দায়িত্ব পালন শেষে তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় নেন। ছালামের মেয়াদে চট্টগ্রামে নেওয়া ফ্লাইওভারসহ নানা প্রকল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল থেকেও নানা প্রশ্ন উঠেছিল। তবে গতবার মেয়র মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হলেও এবার মনোনয়ন পেতে পারেন বলে তার অনুসারীরা আশা করছেন। এমন সময়ে সিডিএর বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সময়েই গত সপ্তাহে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কারণে সমালোচনার মুখে পড়েন বিদায়ী চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এরমধ্যে পতেঙ্গায় আউটার রিং রোডের একটি অংশে ওয়াকওয়ে ধসে পড়ার পর নতুন করে বিতর্কে পড়েন ছালাম।

সেই ইস্যুটিকে কাজে লাগিয়ে ছালামের বিরুদ্ধে মাঠে নামে মেয়রপন্থী হিসেবে পরিচিত লোকজন। তারা ব্যানার হিসেবে সামনে আনে ‘চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’ নামের একটি সংগঠনকে। সেই সংগঠনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহ সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রেসক্লাবের সামনে একটি সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সমাবেশ থেকে চট্টগ্রামের চলমান মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বিশেষ সেল গঠনের দাবি উঠে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর আউটার রিং রোড প্রকল্প সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর, মেট্রোরেল চালু, প্রকল্প পাসে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, কালুরঘাটে নতুন রেলসেতু নির্মাণ, প্রকল্প পর্যবেক্ষণে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, উন্নয়নে মেয়র ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে সমন্বয়ক করার দাবি জানানো হয়।

আবদুচ ছালামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার ব্যাংক একাউন্ট যাচাইয়ের বিষয়ে জাসদ নেতার বক্তব্যের বিষয়ে রাতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন কথায় কান দিতে নেই। তবে একথা যিনি বলেছেন তাকেও আমি চিনি। একটি কথা বলতে চাই, কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে গত ১০ বছরে সিডিএর ইতিহাসে ২০ হাজার কোটি টাকার টেন্ডারে আমি ২০ টাকা অনিয়ম করেছি দুর্নীতি করেছি। তখন বিচার করতে হবে না আমি নিজেই আত্মহত্যা করব।’

কারণ ব্যাখা করে ছালাম বলেন, ‘দেশের কোন সংস্থার টেন্ডার প্রক্রিয়ার সময় সামন্যতম হলেও সমস্যা হয়নি এমন নেই। কিন্তু সিডিএর ইতিহাসে দশ বছরে নীরবে সব টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এরপরও অংশগ্রহণকারী কোনও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানই বলতে পারবেনা, আমার সময়ে নূন্যতম অনিয়ম হয়েছে। তাই আমার বিরুদ্ধে যারা চ্যালেঞ্জ করছে তাদের চ্যালেঞ্জ ওপেনলি গ্রহণ করলাম। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আছে, দুদক আছে, তারা আমার অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করুক। আমি শতভাগ প্রস্তুত।’

তিনি আরো বলেন, ‘সিডিএতে অনিয়ম হয়নি সেটা আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারবো না। তবে আমি ছালামের হাত দিয়ে এক টাকারও অনিয়ম হয়েছে বলে কেউ বলতে পারবে না।’

সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সরকারি বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার চাই। উদ্বোধনের আগেই আউটার রিং রোডের ওয়াকওয়ে ধসে পড়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জন্য সরকারের অর্জন ম্লান করে দেওয়ার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।’

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, পরিবেশবিদ মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, নারীনেত্রী নুর জাহান খান, শিক্ষাবিদ শিল্পী হাসিনা জাকারিয়া বেলা প্রমুখ।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!