আবদুচ ছালামের শেষ বেলায় ১০ কোটি টাকার প্লট পাঁচ অনুচরের হাতে

মেয়াদের শেষ বেলায় এসে ১০ কোটি টাকা মূল্যের প্লট পাঁচ অনুচরের হাতে তুলে দিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। পুরো মেয়াদেই তার বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল নানা মহলের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৩১ মার্চ চউকের কল্পলোক ও অনন্যা আবাসিক এলাকার পাঁচটি প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন চউক চেয়ারম্যান। চলতি বাজারমূল্যে এসব প্লটের দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা। এবার প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ছালামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চউকের দুই বোর্ড সদস্য কেবিএম শাহজাহান ও জসিম উদ্দিন শাহকে। এছাড়া আবদুচ ছালামের নিজস্ব ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) তারেক গণির মা জাকিয়া বেগম, চেয়ারম্যানের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওয়েল গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তা সেতু বড়ুয়া ও হামিদ উল্লাহ নামের আরেক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে তিনটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কেবিএম শাহজাহানকে অনন্যা আবাসিক এলাকায় এবং অন্যান্যদের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কল্পলোক আবাসিক এলাকায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সেতু বড়ুয়া নিজেকে ওয়েল গ্রুপের জনসংযোগ কর্মকর্তা নয় দাবি করে বলেন, “আমি সেখানে চাকরি করি। শুনেছি প্লট বরাদ্দ পেয়েছি কিন্তু এখনো বরাদ্দের চিঠি হাতে পাইনি।”

বোর্ড সদস্য কেবিএম শাহজাহান বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী প্লট দেওয়া হয়েছে গত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এখন এসব নিয়ে ঝামেলা নেই। কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে পদোন্নতির বিষয় নিয়ে।”

সংশ্লিষ্টদের মতে, নিয়মানুযায়ী চউকের কোনো প্লট বরাদ্দ নিতে হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করতে হয়। এরপর আবেদন যাচাই-বাছাই করে কোটা ভিত্তিতে প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি। অনেকটা গোপনে নিজের পছন্দের লোকদের প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন চউক চেয়ারম্যান। তাছাড়া মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও নেওয়া হয়েছে গোপনে।

এ বিষয়ে জানতে চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মুঠোফোনে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে চউকের সচিব তাহেরা ফেরদৌস বেগম বলেন, “নিয়ম মেনে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে এসব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। আমি মুঠোফোনে কিছুই বলতে পারবো না। বিষয়টি নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।”

চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম গত ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি চউকের ইতিহাসে রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে ওই পদে নিয়োগ পান। দায়িত্ব নিয়ে নগরীর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশকিছু কাজ করলেও সেবা সংস্থার মূল যে কাজ নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসন সেই কাজে ছিলেন অমনোযোগী। নিজের খেয়ালখুশি মতো চালিয়েছেন চউকের প্রশাসন। সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতা হওয়ায় অনেকটা গায়ের জোরে ধারাবাহিকভাবে অনিয়ম করেছেন। এ নিয়ে কেউ মুখ খুললেই শাস্তিমূলক বদলি করা হতো—এমন অভিযোগ অনেকেরই। এমনকি চাকরি হারানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। সেই ধারাবাহিকতায় তিনি চউকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য রাখা ১১০টি প্লটের মধ্যে ৪০টি প্লট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরাদ্দ দেন। পরবর্তীতে অন্যান্য প্লটগুলো নিজের পছন্দমতো ঘনিষ্ঠদের বরাদ্দ দেন ২০১৪ সালে। এরপর আরও কিছু প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হয় চউক চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা ও ইচ্ছায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, দায়িত্ব পরিবর্তনের আভাস পাওয়ার পরপর চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে চউকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিনকে। ২৩ এপ্রিল তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সেই হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের শেষ কর্মদিবস হচ্ছে ২২ এপ্রিল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!