তীব্র স্রোতে হ্রদের পানি ঢুকছে কর্ণফুলীতে, ডুবতে পারে চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা

কাপ্তাই হ্রদের ১৬টি স্লুইস গেইট ছয় ইঞ্চি খুলে দেওয়া হল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। এখন প্রতি সেকেন্ডে নয় হাজার কিউসেক পানি ছাড়া হচ্ছে কর্ণফুলীতে। এতে নদীর স্রোত ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। কাপ্তাই হ্রদে স্বাভাবিক অবস্থায় ৮৬ ফুট এমএসএল (মিনস্ সি লেভেল) থাকে। এখন তার চেয়ে ২০ ফুট বেশি আছে।

কাপ্তাই হ্রদে পানি আরও বেড়ে গেলে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও পটিয়া এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী ও হালদা তীরবর্তী চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকাও পানিতে ডুবতে পারে। রাঙামাটি শহরের হ্রদতীরবর্তী অন্তত নিম্ন আয়ের ১৫ হাজার মানুষ বসতিহারা হতে পারে। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ নদীতে চলাচলকারী সকল নৌযানকে সাবধানে চলাচল করতে সতর্ক করে দিয়েছে।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক ড. এমএমএ আব্দুজ্জাহের চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, “পানির বর্তমান উচ্চতা ১০৬.২ ফিট এমএসএল (মিনস্ সি লেভেল)। এই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথই হলো কর্ণফুলীতে পানি ছেড়ে দেওয়া। তাই আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ১৬টি গেইট ছয় ইঞ্চি খুলে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে প্রতি সেকেন্ডে নয় হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলীতে গড়াচ্ছে।”

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার (১৪ জুলাই) থেকে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটই চালু হয়। আর ২৪২ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রেটিতে প্রথম দিনেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২০২ মেগাওয়াট। অথচ পানির অভাবে গত ২০ মে থেকে পাঁচটির মধ্যে মাত্র একটি ইউনিট চালু রেখে মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে আসছিল।

এক টানা ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এমনিতেই বন্যাকবলিত। এমন পরিস্থিতিতে কর্ণফুলীর পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির শঙ্কা রয়েছে। আবার নতুন নতুন এলাকাও প্লাবিত হতে পারে।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুবে গেছে রাঙামাটির পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। মঙ্গলবার বিকেলের দিকে হঠাৎ করে পানি বেড়ে গিয়ে সেতুটি ৬ ইঞ্চি পানির নিচে তলিয়ে যায়। বিকেল পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা ১০৭ এমএসএল (মিনস্ সি লেভেল) রয়েছে।

এমন শঙ্কায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কী প্রস্তুতি রয়েছে—জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন এবং কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করছি। রাঙামাটিকে নিরাপদ রাখাটা যেমন জরুরি, তেমনি কর্ণফুলী তীরের অধিবাসীদের নিরাপত্তাও সমান জরুরি। তাই পানি যাতে ধীরে ধীরে ছাড়া হয় সে বিষয়টি আমরা রাঙামাটি প্রশাসনকে জানিয়েছি। উনারাও দুই এলাকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সেকেন্ডে ১৮ হাজার কিউসেকের পরিবর্তে নয় হাজার কিউসেক পানি ছাড়ছেন।”

রাঙ্গুনিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‌‘মঙ্গলবার সকালেই পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত ছিল। আমাদের অনুরোধে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যায় ছেড়েছেন। ১২ ঘন্টায় চলমান ভারী বৃষ্টির যে পানি জমে ছিল তা অনেকটুকু সরে যাওয়ার ফলে হ্রদ থেকে ছাড়া পানি কর্ণফুলী ধারণ করতে পারবে। প্রস্তুতি হিসেবে আমরা সোমবার থেকে চন্দ্রঘোনা, মরিয়ম নগর, রাঙ্গুনিয়া পৌরসভাসহ নদীর দুই পাশের ইউনিয়নগুলোতে মাইকিং করিয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দিয়েছি।’

রাঙামাটির জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বর্ষায় হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে জেলায় ২৮ হাজার ৪৫২ জন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলার ১০ উপজেলায় ছয় হাজার ৪৫০ হেক্টর আউশ ধান, ৩৮৮ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা ও ২ হাজার ৪৭৫ হেক্টর সবজির ফসল ক্ষতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে এ পর্যন্ত কাপ্তাই উপজেলায় চারজন ও লংগদু-বরকলে পানির স্রোতে ভেসে দুজনসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!