চাঁদা নিতে এসে জনতার ধাওয়া খেয়ে পালালো পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা, তিন বাইকে আগুন

সোর্স আটক, খামারের অফিস ভাংচুর

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় চাঁদা নিতে এসে জনতার ধাওয়া খেয়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালালো পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এ সময় একটি খামারেও ভাঙচুর চালায় তারা। সন্ত্রাসীদের তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের পর পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। এছাড়া সোর্স সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বৈতরণী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

আটক ব্যক্তির নাম মং সো মারমা। তিনি বৈতরণী এলাকায় নিজস্ব কৃষি খামারের দীর্ঘদিন ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। তবে তার পৈত্রিক বাড়ি পার্বত্য জেলা বান্দরবানের রোয়াজর পাড়া এলাকায়।

স্থানীয় এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৭ মার্চ) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বৈতরণী এলাকায় এসে প্রথমে সুয়ালক খালের উপর নির্মিত সেতুর ঠিকাদার ও পরে একই ওয়ার্ডের পাহাড়ের পাদদেশে ‘গ্রিন ওয়ার্ল্ড এগ্রো নার্সারি’র ম্যানেজারের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। সোমবার আবার আসার কথা বলে চলে যায় সন্ত্রাসীরা।

সোমবার সকাল ১০টার দিকে তিনটি মোটরসাইকেল করে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এগ্রো খামারে এসে ম্যানেজারের নিকট চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সন্ত্রাসীরা খামারের অফিস ভাঙচুর করে। পরে মসজিদে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে জড়ো করলে সন্ত্রাসীরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যায় পাহাড়ে।

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত তিনটি মোটরসাইকেল আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে সন্ত্রাসীদের সোর্স সন্দেহে মং সো মারমা নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেয়।

গ্রিন ওয়ার্ল্ড এগ্রো নার্সারির ম্যানেজার মো. বোরহান উদ্দীন বলেন, ৪০ বছর ধরে বৈতরণী এলাকায় গরু-ছাগল, মুরগি ও আমসহ বিভিন্ন ফলের বাগান করে আসছি। বিগত দুই মাস আগে সন্ত্রাসীরা আমাদের খামারে এসে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলে তা দিইনি। রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ‘সুস্থ সমাজ, সুস্থ পরিবেশ’ নামে একটি কাগজে লিখে আবারও দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তারা চলে যায়। সোমবার সকালে এসে দাবিকৃত টাকা দিতে বলে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, সন্ত্রাসীরা আমাদের অফিস কক্ষ ভাঙচুর করে। পরে স্থানীয়দের খবর দিলে তারা মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার দিলে সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পাহাড়ে আত্মগোপন করে।

স্থানীয় পুরানগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা প্রায় দু’বছর ধরে পুরানগড়ের কয়েকটি ওয়ার্ডে লোকজনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি ও আদায় করে আসছিল। তবে এলাকাবাসী ভয়ে মুখ খুলেনি। সোমবার সকালে আবারও সন্ত্রাসীরা চাঁদা চাইতে আসলে মসজিদের মাইকে ডাকাত আসার ঘোষণা দিলে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পাহাড়ে আত্মগোপন করে। এলাকার লোকজন এখন খুবই আতঙ্কে রয়েছে। তারা প্রশাসনিক নিরাপত্তা দাবি করছে।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, চাঁদা দাবি করতে আসা পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এলাকাবাসীর ধাওয়া খেয়ে পাহাড়ে আত্মগোপন করে। সন্ত্রাসীদের সোর্স সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!