চট্টগ্রামের দক্ষিণ যুবলীগে ৫ নেতা আলোচনায়, দক্ষিণের মন্ত্রী-এমপিরা নিজেদের লোক ঢোকাতে মরিয়া

সম্মেলনের তিন মাস পার হলেও এখনও ঘোষণা হয়নি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটি। সম্মেলনের পর সভাপতি ৭ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৭ জন রয়েছেন লড়াইয়ে। এদিকে কমিটির শীর্ষ পদ এক মন্ত্রী ও দুই সংসদ সদস্যের বলয়ের দখলে থাকবে বলে শোনা যাচ্ছে। পদপ্রত্যাশীরা এখন তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কমিটির দিকে। শিগগিরই কমিটি ঘোষণার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। তবে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সভাপতি পদে তিনজন ও সম্পাদক পদে দুজন আছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

এর আগে গত ২৮ মে দক্ষিণ যুবলীগ প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরে প্রথমবারের মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। দিনভর সম্মেলন আর কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলেও কমিটি ঘোষণা ছাড়াই তা শেষ হয়।

এ সময় জেলা কমিটির সভাপতি পদে ১৩ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯ জন প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেন। কিন্তু সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনে প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী না থাকায় ৫ জন সভাপতি ও ১২ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ঝরে যান। সে হিসেবে এখন নেতৃত্বের লড়াইয়ে সভাপতি পদে ৭ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৭ জন টিকে আছেন।

গত ৩ আগস্ট আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সঙ্গে দেখা করে মৌখিকভাবে সভাপতি প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান। মূলত এরপর থেকেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে দক্ষিণের কমিটি নিয়ে। টিপু সুলতান চৌধুরী জেলা যুবলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটিতে প্রায় ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন

সভাপতি-সম্পাদক পদে ৩৪ প্রার্থী থাকলেও আলোচনায় আছেন পাঁচজন। এরমধ্যে সভাপতি পদে তিন ও সম্পাদক পদে আছেন দুজন। সভাপতি পদে আলোচিত প্রার্থীরা হলেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থ সারথি চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুক এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক নাছির উদ্দীন মিন্টু। এদের মধ্যে পার্থ সারথি সরাসরি কারও রাজনীতি না করলেও মোহাম্মদ ফারুক ভূমিমন্ত্রী ও নাছির উদ্দীন মিন্টু ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার অনুসারী।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বোয়ালখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। সাইফুল দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বোয়ালখালীর সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদের অনুসারী এবং আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম প্রয়াত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর অনুসারী ছিলেন।

তবে মোহাম্মদ ফারুক আওয়ামী লীগের দুই সংসদ সদস্যের গ্যাঁড়াকলে পড়লেও রাজনীতির মারপ্যাঁচে নেই অপর দুই সভাপতি প্রার্থী পার্থ সারথি চৌধুরী ও নাছির উদ্দীন মিন্টু। তবে তারা দুজনই একই উপজেলা প্রার্থী হওয়ায় পড়েছেন বিপাকে। সেদিক হিসেব করলে কপাল খুলতে পারে ফারুকের।

কমিটির বিষয়ে মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘কে পদ-পদবি থেকে প্রত্যাহার করেছেন আর কে আছে, তা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। তারা যাকে যোগ্য মনে করবে তাকেই পদে আসীন করবে।’

পার্থ সারথি চৌধুরীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো গ্রুপিং রাজনীতির মধ্যে নেই। তবে আমার সামনে সমস্যা হলো একটা, আমার উপজেলায় আরও একজন প্রার্থী আছেন। দুজনের মধ্যে একজন মাইনাস হবে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় কমিটি যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকেই মনোনীত করবে।’

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে নানাদিক বিবেচনায় এগিয়ে আছেন বোয়ালখালীর সাইফুল ইসলাম ও পটিয়ার আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। তাদের ওপর ‘আশীর্বাদ’ আছে জেলা ও কেন্দ্রের। এজন্য তারা দুজন সর্বশক্তি দিয়ে পদ পেতে লড়ে যাচ্ছেন।

তবে সাইফুল বোয়ালখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পরও কিভাবে যুবলীগের রাজনীতিতে আসতে চাইছেন, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

এ ব্যাপারে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক পদটি পেতে আমি শতভাগ আশাবাদী। কারণ স্থানীয় সাংসদ আমার জন্য সুপারিশ করেছেন। আশা করছি, যুবলীগের চেয়ারম্যানও আমাকে সুনজরে দেখবেন।’ তবে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই বলে দাবি করেন।

আরেক সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে আসছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যও ছিলাম। দলের দুঃসময়ে রাজনীতির মাঠে-ময়দানে, আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিলাম। বিএনপির দুঃশাসনের সময় জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তাই আমার রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে কেন্দ্র বিবেচনা করবে।’

কমিটির বিষয়ে কথা হয় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরে কমিটি গঠন করা হবে সৎ নিষ্ঠাবান ও পরিচ্ছন্ন নেতাদের সমন্বয়ে। ইতোমধ্যে  যারা বিভিন্ন অপকর্মে ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছেন সেসব নেতারা কমিটিতে স্থান পাবেন না।’

দক্ষিণ জেলা যুবলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কারণে কেন্দ্রীয় নেতারা সাধারণ সম্পাদক পদে সাইফুল ইসলাম ও আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের ওপর আস্থা না রাখেন তাহলে সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে থেকে কেউ এ পদ পেতে পারেন। সে হিসেব থেকে বিবেচনায় আসতে পারেন পার্থ সারথি চৌধুরী। এক উপজেলা থেকে সভাপতি ও আরেক উপজেলা থেকে সাধারণ সম্পাদক পদ বানিয়ে নতুন-পুরাতনের সমন্বয় হতে পারে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!