চট্টগ্রামে চালের বাজার পাগলাঘোড়া, উত্তরবঙ্গের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে চালের দাম দ্বিতীয় দফা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের দাম এ মাসের শুরুতে কমলেও এবার নতুন করে আবার বেড়েছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ২০০ টাকা দাম বেড়েছে। ডলারের দাম ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি— মূলত এই দুই কারণে বাড়ছে চালের দাম।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিপুল পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে। তবে মিল মালিকরা চালের সরবরাহ একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে মানভেদে চালের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, ডলারের দাম বৃদ্ধি ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে অস্থিরতায় রয়েছে চালের বাজার। বেসরকারি পর্যায়ে অনেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে। ফলে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলীয় মোকামগুলো থেকে চাল পরিবহনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। পরিবহনের বাড়তি ভাড়ার কারণেও চালের দাম বাড়ছে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, উত্তরবঙ্গের মিলারদের সাথে যোগসাজশে চট্টগ্রামের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

সরকার উদ্যোগ নেওয়ার পরও চালের দাম কমাতে পারেনি। সর্বশেষ ২৫ জুন চাল আমদানির শুল্ককর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। শুল্কছাড়ের পর প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাল আমদানি হয়েছে সামান্য।

জানা গেছে, চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি চালের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে গেছে। জিরাশাইল সিদ্ধ, নাজিরশাইল সিদ্ধ, স্বর্ণা সিদ্ধ, পাইজাম সিদ্ধ ও আতপ, মিনিকেট সিদ্ধ ও আতপ, কাটারিভোগ সিদ্ধ ও আতপ, বেতি আতপ ও মোটা সিদ্ধ-সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। পরিবহন ভাড়া বাড়ার পাশাপাশি বর্তমানে ধানের দামও বেড়েছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বর্তমানে পাইকারিতে জিরাশাইল সিদ্ধ চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিন আগে এ চালের দাম ছিল বস্তাপ্রতি ৩ হাজার ২৫০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।

পাইকারি বাজারে মোটা চাল বি-২৮ ও পাইজাম ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এ চাল প্রতি বস্তা দাম ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৫২৫ টাকা। চিকন চাল মিনিকেট বস্তাপ্রতি ৩ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। কয়েকদিন আগে এ চালের দাম ছিল ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। একই চাল দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৩ হাজার ১০০ টাকা। এভাবে সব ধরনের চাল বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বা তারও বেশি বেড়েছে।

পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সোলায়মান হোসেন জানান, চালের দাম একটু কমার পর আবার বাড়তে শুরু করেছে। ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে কয়েক দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজার মনিটরিং না থাকায় উত্তরবঙ্গের বড় মিলার ও বড় কোম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে।

চাক্তাই চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সরকার শুল্ককর কমানোর পর কমেছিল চালের দাম। কিন্তু উত্তরবঙ্গে মিলারদের বৃদ্ধির কারণে এখানে বেড়ে যাচ্ছে দাম।

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!