বাতাস দিয়ে গ্যাসের দাম নিচ্ছে চট্টগ্রামের ফিলিং স্টেশনগুলো

অকটেন-ডিজেল-পেট্রোলের খরচ কমাতে গাড়ির মালিকরা পয়সা খরচ করে ঝুঁকছেন সিএনজির দিকে। এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকরা। তারা কৌশলে গ্যাসের বদলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে বাতাসও। গ্রাহকেরা গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করেও তাদের কারসাজিতে টাকা দিয়ে কিনছে বাতাস।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) উবার চালক আব্দুর রহমানের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু সিএনজি ফিলিং স্টেশন ঘুরে সুকৌশলে বাহনে বাতাস ঢোকানোর বিষয়টি নজরে আসে।

জানা যায়, নগরীর ফিলিং স্টেশনগুলোর নজরদারির দায়িত্ব বিএসটিআই কর্তৃপক্ষের। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় মনিটরিং করা সম্ভব হয়নি। তবে সবকিছু বর্তমানে প্রায় তৈরি, শুধু বাকি রয়েছে নির্দেশ। সিএনজিচালিত গাড়ির মালিকদের অভিযোগ সঠিক এবং অচিরেই তা বন্ধ হবে বলে জানিয়েছেন বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক শওকত ওসমান।

যেভাবে গ্যাসের স্থলে বাতাস ঢোকে
সূত্র মতে, ৬০ লিটার সিলিন্ডারে ১৫ সিসি, ৯০ লিটার সিলিন্ডারে ২১ সিসি এবং ১০০ লিটার সিলিন্ডারে সর্বোচ্চ ২৫ সিসি গ্যাস ঢোকানো যায়। ফিলিং স্টেশনগুলোতে প্রতি সিসি গ্যাস নেওয়া হয় ৪৩ টাকা করে। জানা যায়, গ্যাসের চাপ ২০০ থেকে ২৫০ মধ্যে থাকা ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাস রিডিং সঠিক পাওয়া যায়। তবে গ্যাসের চাপ যদি ১৮০-এর নিচে নামে তাহলে গ্যাসের প্রেসার কম থাকে। চাপ কমের কারণে গ্যাসের সঙ্গে বাতাসও বেশি হারে ঢুকে যায়।। প্রতিটি ফিলিং স্টেশনে কর্মরত প্রকৌশলী ঠিক সেখানেই কৌশলে আশ্রয় নেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্যাসের সঙ্গে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাতাস ভরে দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে নেওয়া হয় পুরো গ্যাসের বিল।

টাইগারপাস রেইনবো ফিলিং স্টেশনের দায়িত্বে থাকা বশির উদ্দিন (৩৫) বলেন, ‘অন্যদের অবস্থা জানি না। তবে আমাদের এখানে এমন কাজ করা হয় না। কিন্তু উবার চালক আব্দুর রহমান (গাড়ি নং চট্টমেট্রো ১১-২০৪২) অভিযোগ করেন টাইগারপাস রেইনবো ফিলিং স্টেশনের বিরুদ্ধে। তার প্রশ্ন— ১৬ লিটারের সিলিন্ডারে ১৭ সিসি গ্যাস কিভাবে ধরে? তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সত্যতা যাচাই করতে গেলে প্রথমে ‘মেশিন নষ্ট ছিল’— এ অজুহাত দেখান বশির। পরে তাদের ডাবল মেশিনে গ্যাস দেওয়ায় চাপ ২৫০ দেখানো হয়।

তবে সিএনজিচালক রহিম উল্লাহ (৪৫) জানান, ‘সাংবাদিক আসার খবরে অন্য মেশিন চালু করে দেওয়া হয়, এ কারণে এতক্ষণ জ্যাম থাকলেও মুহূর্তে জ্যাম ছুটে যায়। তাহলে কি ইচ্ছে করেই গ্যাসের চাপ কমের নাটক সাজানো হয়?’

গ্যাস কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার দাবি, গ্যাসের চাপ ঠিকই থাকে, ঝামেলা মূলত ফিলিং স্টেশনের মেশিনেই। তাদের সবসময়ের অজুহাত গ্যাসের চাপ কম। অনেক সময় একটি মেশিন বন্ধ রাখার কারণে গ্যাসের চাপ এতোই কমে দাঁড়ায় যে, ৫০০ টাকায় গ্যাস মেলে ৩০০ টাকার। বাকি ২০০ টাকাই বাতাস।

নগরীর আকবরশাহ ইস্পাহানী ফিলিং স্টেশনের জুয়েল বলেন, ‘আসলে যারা চুরি করার, তারা করবেই।’

নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, ফিলিং স্টেশনের মেশিনগুলো সাধারণত থাকে দৃষ্টির বাইরে— পিছনে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিতে গিয়ে মানুষ এমনিতেই বিরক্ত থাকে। এ কারণে গ্যাসের বদলে বাতাস ঢুকছে কি ঢুকছে না— সব জেনেও এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। এই নিরবতাকে পুঁজি করে ফিলিং স্টেশনগুলো প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!