চবির ছাত্র সেজে ‘কাব্যে’র প্রেমের জালে বহু তরুণী, ক্যাম্পাসেই বিচরণ ১২ বছর ধরে

থানায় লাখ টাকা খোয়ানো ছাত্রীর মামলা

মো. নাজিম উদ্দীন। ফেসবুকে তিনি পরিচিত আরেফিন কাব্য (Arefin Kabbo) নামে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সদা সরব দেখা যায় তাকে। প্রায়ই বগিভিত্তিক সংগঠন ৬৯ এর টি-শার্ট পরে ছবিও আপলোড করেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে করতেন স্মৃতিচারণও। অথচ প্রক্টরিয়াল বডির জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রই না। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বিবিএ পাস করলেও ছাত্র পরিচয়ে গত ১২ বছর ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন তিনি।

এতেই থেমে থাকেননি নাজিম উদ্দীন ওরফে আরেফিন কাব্য। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক ছাত্র বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা—এনএসআইতে চাকরি করছেন—এমন পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য মেয়ের সাথে গড়ে তুলেছেন প্রেমের সম্পর্ক।

৩০ বছর বয়সী নাজিম উদ্দীন ওরফে আরেফিন কাব্য নোয়াখালীর সুধারাম থানার রামবল্লভপুরের আবুল বাহারের ছেলে। তিনি বর্তমানে সীতাকুণ্ডের জাফরাবাদ আলীনগরের বাহার কোম্পানির বাড়িতে থাকেন।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২ মে) পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম করে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর আরেফিন কাব্য ধরা পড়েন প্রক্টরিয়াল বডির হাতে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। বর্তমানে ওই ছাত্রীর দায়ের করা মামলায় থানায় রয়েছেন এই ‘প্রতারক’।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী মামলার এজাহারে লিখেন, ‘প্রায় সাত মাস আগে ফেসবুকের মাধ্যমে বিবাদীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বর্তমানে এনএসআইতে চাকুরি করেন বলে পরিচয় দেন। এরপর থেকেই তার সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা চলতে থাকে। কথা বলার এক পর্যায়ে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে বিবাদী বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে বিভিন্ন সময় আমার থেকে এক লাখ টাকা নেয়। সম্পর্ক থাকাকালীন সে আমাকে প্রায় সময়ই দেখা করার জন্য বাধ্য করতো।’

এজাহারে ওই ছাত্রী আরও লেখেন, ‘বিবাদীর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক থাকার কারণে বিবাদী আমার ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ তার নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করতো। বিবাদী বিভিন্ন সময় আমার শরীরের স্থিরচিত্র বা ভিডিও ধারণ করে তার কাছে পাঠানোর জন্য হুমকি দিতো। বিবাদীর এমন ব্যবহারে আমি অতিষ্ট হয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।’

ঘটনার শিকার ওই ছাত্রী এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক দশটার সময় বিবাদী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে আমাকে দেখা করার জন্য জোরাজুরি করলে আমি হল থেকে নেমে ঘটনাস্থলে আসি। ঘটনাস্থলে আসার পরে বিবাদী আমাকে টানাহেঁচড়া করে আমার বাম হাতের বাহুতে ও ঘাড়ের নিচে নখের আঁচড় দিয়ে সাধারণ জখম করে। তখন আমি বাঁচার জন্য আর্তচিৎকার করলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্ররা এগিয়ে এসে বিবাদীকে আটক করে। আটক করে তার পরিচয় সঠিকভাবে বলার জন্য বললে সে জানায়, সে আমার কাছে মিথ্যা সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ গ্রহণ করে এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। মূলত সে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি করে। ওই বিষয়ে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অবগত করি।’

ভুক্তভোগী ছাত্রী জানান, ‘প্রায় ছয় মাস আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রেমে জড়ায় প্রতারক মো. নাজিম উদ্দিন। পরবর্তীতে এনএসআই’র সদস্য হিসেবেও পরিচয় দেয় এ যুবক। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দিত বিভিন্ন রকম শর্ত। চুল কেটে ফেলা, রুমমেটদের সঙ্গে সম্পর্কছেদ করা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ কাটারও শর্ত দিত মেয়েটিকে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর কথা অনুযায়ী লাখের বেশি টাকা নিয়েছে ছেলেটি। এটিই প্রথম নয় এর আগেও এরকম প্রতারণা করেছে ছেলেটি। যার প্রমাণ আমি পরবর্তীতে পেয়েছি। হাটহাজারী থানায় এ নিয়ে আমি মামলা করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এক ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা নাজিম উদ্দীন নামের এই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে সে চবি ছাত্র পরিচয়ে অসংখ্য মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা স্বীকার করে। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ে ১২ বছর ধরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে আসছে। কিন্তু আদতে সে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি কলেজ থেকে বিবিএ পাস করেছে।’

লিটন মিত্র আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর কাছ থেকে সে এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন ছবি দিয়ে সে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতো। পরবর্তীতে ওই মেয়ে একটি মামলা দায়ের করে। বর্তমানে সে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!