বন্দরের ৭০০ কর্মীর মুখে হাসি এনে দিল নতুন সুবিধা

জানুয়ারি থেকে বন্দর খোলা সাত দিন ২৪ ঘন্টা

আমদানি-রপ্তানি আরও গতিশীল করতে চট্টগ্রাম বন্দরের ৭০০ কর্মচারী আগামী জানুয়ারি থেকে অপারেশনাল হিসেবে বেতনভাতা পাবেন। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে তারা মিনিস্ট্রিয়াল হিসেবে চাকরি করতেন। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তাদের অপারেশনাল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

বন্দরে প্রায় ৫ হাজার কর্মচারী সপ্তাহে সাতদিন কাজ করলেও ‘অপারেশনাল’ এর মর্যাদা পাচ্ছিলেন না এ ৭০০ কর্মচারী। জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে এ ৭০০ কর্মচারীর। এর আগে কর্মচারীদের এক সভায় অপারেশনাল দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলেও লিখিত আদেশ দেননি বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। এবার বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে লিখিত অফিস আদেশ দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ।

জানা গেছে, আমদানি-রপ্তানিতে আরও গতিশীলতা বাড়াতে আগামী জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের অফিসিয়াল কার্যক্রমও সপ্তাহের ২৪ ঘণ্টাই থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মতে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘন্টা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে সপ্তাহের শনিবারও বন্দর ভবনের সব কার্যক্রম চলবে।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সবসময় সংযুক্ত থাকার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের অপারেশনাল কার্যক্রমকে ২৪ ঘন্টা চালু রাখা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা আগে এ সুবিধা পেলেও পেত না কর্মচারীদের একটি বড় অংশ। ফলে এ নিয়ে দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বন্দর বিসিএ নেতাদের। তাদের দাবি পূরণের জন্য আন্দোলনও চলমান ছিল কর্মচারীদের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত বছর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘন্টা চালু রাখার কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সাথে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তারাও ২৪ ঘন্টা চালু থাকার সুবিধাটা পেতেন। কিন্তু কিছু কর্মচারী এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এবার কর্মচারীদেরও অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে। এটি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে করা হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে তারা এই সুবিধা পাবে। এখন কর্মকর্তা কর্মচারী সবাই অপারেশনাল।’

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ১২ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টা বন্দর চালু থাকলে পণ্য শুল্কায়নসহ সব ক্ষেত্রেই চাপ কমবে, দক্ষতা বাড়বে। এজন্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের আরও প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এছাড়াও পণ্য পরিবহনে সড়কের ওপর চাপও কমবে। সারা দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেহেতু রাতে পণ্য খালাস হবে, তাতে জনগণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি হবে না।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর চালু রাখলেও সরকারের অন্যান্য বিভাগ— যেমন লেনদেনের জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিএসটিআই, আণবিক শক্তি কমিশনের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি প্রয়োজন। এসব অংশীদারদের নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করা দরকার।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে যেসব ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিটি) চালু আছে সেখানে স্ক্যানিং মেশিন বসানোর বাধ্যবাধকতা আছে। তারাও স্ক্যানিং বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, কেননা ২৪ ঘন্টা বন্দর চালু রাখতে হলে তাদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে। জনবলের অভাব, অবকাঠামোগত পরিবর্তন, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সীমাদ্ধতাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তা এতোদিন চালু করা সম্ভব হয়নি ।

এ বিষয়ে বন্দর সিবিএর সভাপতি আবুল মনছুর আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ১৯৬৭ সালের একটা আইন অনুসারে বন্দরে মিনিস্ট্রিয়াল ও অপারেশনাল— দুই ধরনের কর্মচারী আছে। কিন্তু সপ্তাহে সাতদিন কাজ করলেও মিনিস্ট্রিয়াল কর্মচারীরা ওভারটাইম পেতো না। এখন অপারেশনাল ঘোষণা করায় মিনিস্ট্রিয়াল কর্মচারীরাও ওভারটাইম ভাতা পাবেন। এখন থেকে শনিবারও হিসাব বিভাগসহ বন্দরের অনেক বিভাগ খোলা থাকবে। ব্যবসায়ী ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!