‘গুরু’ মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য ‘শিষ্য’ সুজনের সময় হয় না এখন

সুজন বলছেন, ‘আমি থাকা না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছায়াসঙ্গী ছিলেন তিনি। দিনভর নানান কর্মসূচিতে হাজিরও ছিলেন। কিন্তু ‘রাজনীতির গুরু’র মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মুখ দেখানোরও সময় হল না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নগরীর কাজির দেউড়ির একটি কনভেনশন সেন্টারে স্মরণসভার আয়োজন করে মহানগর আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীসহ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

‘গুরু’ মহিউদ্দিন চৌধুরীর জন্য ‘শিষ্য’ সুজনের সময় হয় না এখন 1

এই স্মরণসভায় নগরের সকল গুরুত্বপূর্ণ নেতা উপস্থিত থাকলেও এতে অংশ নেননি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত চসিকের বর্তমান প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও। দীর্ঘ সময় ধরে নগর আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতে সরব থাকা সুজনকে বেশ কিছুদিন ধরেই নগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভায় সুজনের অংশ না নেওয়ার বিষয়টি অবাক করেছে দলীয় নেতাকর্মীদের।

নগরের একাধিক নেতাও বলছেন, হঠাৎ করে দলীয় কর্মসূচির প্রতি সুজনের উদাসীনতা রহস্যজনক মনে হচ্ছে তাদের কাছেও। তবে সুজন বলছেন, আগে নিয়মিত বিকেলে দলীয় সভা-সেমিনারগুলো আয়োজন করা হলেও তিনি চসিকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সব প্রোগ্রাম করা হচ্ছে সকাল ১০টায়। ওই সময় করপোরেশনে ব্যস্ত থাকায় দলীয় কর্মসূচিতে থাকতে পারছেন না তিনি। এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের মেয়াদ নেই— উল্লেখ করে এসব প্রোগ্রামে তার ‘থাকা না থাকায় কোনো পার্থক্য নেই’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উনি (সুজন) পর পর অনেকগুলো প্রোগ্রামে আসেননি। আমাদের প্রতিটা প্রোগ্রামে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নোটিশের মাধ্যমে ও মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেন। আমাদের প্রতিটা প্রোগ্রামের ব্যাপারে অবশ্যই অবশ্যই প্রশাসক মহোদয় অবগত আছেন। এখন কেন উনি অনুপস্থিত থাকছেন— এটা উনিই বলতে পারবেন।’

মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভায় সুজনের অনুপস্থিতির বিষয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘বিশেষ করে আজকে— যিনি কথায় কথায় আমাদের প্রয়াত নেতার নাম উচ্চারণ করে থাকেন। উনার একেবারে একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে নিজেকে দাবি করে থাকেন। আজকে মহিউদ্দিন ভাইয়ের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। আমরা কবরে গেলাম, জেয়ারত করলাম, ফুল দিলাম, আলোচনা সভা হলো, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহোদয় আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হলেন। পরে আমরা সবাই মহিউদ্দিন ভাইয়ের বাসায় গেলাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম, এখানে কোনোখানেই কিন্তু উনাকে দেখি নাই।’

চসিক প্রশাসক হওয়ার পর থেকেই সুজন দলীয় কর্মসূচিতে এমন গরহাজির থাকছেন— এমন কথা জানিয়ে নিজের সঙ্গে তুলনা করে চসিকের সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘এর আগেও পর পর অনেকগুলো অনুষ্ঠানে উনাকে দেখিনি। ভাস্কর্য ইস্যুতে আমাদের অনেকগুলো প্রোগ্রাম হলো। কোনো প্রোগ্রামে কিন্তু উনি আসছেন না। কেন আসছেন না, কী কারণে আসছেন না? আমিও তো মেয়র ছিলাম, পার্টির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। আমি একই দিন সব প্রোগ্রামগুলো করি নাই?’

দলীয় কর্মসূচির প্রতি সুজনের উদাসীনতাকে রহস্যজনক মন্তব্য করে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘এটা আমার কাছেও রহস্যজনক মনে হয়। আমি কিন্তু স্টেজে বসে অনেককে জিজ্ঞাসা করেছি— কারণটা কী? প্রত্যেকটা কর্মসূচিতেই দেখছি। একদিন হতে পারে, উনি যদি কোনো প্রোগ্রামে থাকে রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম থাকলে পার্টিসিপেট করলো। কিন্তু প্রত্যেকটা প্রোগ্রামে অনুপস্থিত— এমনকি উনার বাড়ির সামনে প্রোগ্রাম হলো সেখানেও উনি অনুপস্থিত।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘১০টা বাজে পতেঙ্গাতে আমার একটা প্রোগ্রাম ছিলো তো। আমরা সবাই মিলে জেয়ারত করে আসছি, এখানে কোনো ফারাক নাই। আমি প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিকে বলে দিছি যে আমি এটাতে যেতে পারতেছি না। আমি এদিকে অনুষ্ঠানে থাকবো।’

সাম্প্রতিক সময়ে নগর আওয়ামী লীগের সব কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুজন বলেন, ‘যাই নাই যে সেটা হলো মিটিংগুলো প্রায় ডাকতেছে সকাল ১০টার দিকে। এ সময় তো আমি সিটি করপোরেশনের কাজে থাকি। আগে বেশিরভাগ কর্মসূচি হতো বিকেলে।’

তাছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ নেই— এ কথা উল্লেখ করে এর মিটিংয়ে থাকা না থাকায় কোনো পার্থক্য নেই মন্তব্য করে সুজন বলেন, ‘আমি থাকা না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো মেয়াদও নাই।’

সকালে দলীয় স্মরণসভায় না থাকলেও বিকেলে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত স্মরণসভায় অংশ নেন তিনি।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!