পটিয়ায় হাম-রুবেলা টিকাদান শুরু ১৯ ডিসেম্বর, টিকা পাবে দেড় লাখের বেশি শিশু

টানা ১৮দিন কর্মবিরতি শেষে উপজেলা পর্যায়ে হাম-রুবেলা টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু করার জন্য একমত হয়েছেন মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারীরা। তবে তিন শর্তে তাদের আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। এর ফলে চট্টগ্রামের পটিয়া ও কর্ণফুলিসহ দেড় লাখেরও অধিক শিশুর টিকা কার্যক্রম চালু হবে আগামী ১৯ ডিসেম্বর থেকে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বি জানান, স্বাস্থ্য সহকারীদের আন্দোলন স্থগিত করায় টিকাদান ক্যাম্পেইন চালু করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রয়োজনীয় ট্রেনিংসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রমও শেষ হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে উপজেলা পর্যায়ে ক্যাম্পেইন। এদিকে, স্বাস্থ্য সহকারীদের আন্দোলন স্থগিত হওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ হেলথ এসিসট্যান্ট এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মিজান উদ্দিন জানান, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের কর্মবিরতি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর (সোমবার) থেকে চট্টগ্রাম জেলার সকল স্বাস্থ্য সহকারীরা কাজে ফিরেছেন। একই সাথে হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন করার জন্য দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার মো. জাবেদ জানান, স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির কারণে ক্যাম্পেইন বাস্তবায়নে ভ্যাকসিনসহ সরঞ্জামই এতোদিন পৌঁছায়নি। যার কারণে শুরুও করা হয়নি হাম-রুবেলার ক্যাম্পেইন। এখন তারা তাদের কর্মবিরতি স্থগিত করার পর আগামী ১৯ ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে হাম-রুবেলাসহ অন্যান্য টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে আসতে শুরু হয়েছে টিকাদান সরঞ্জাম। এবার পটিয়া ও কর্ণফুলি উপজেলায় ১ হাজার ৬৩৫টি অস্থায়ী ক্যাম্পে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি শিশুকে এ টিকার আওতায় আনা হবে।

জানা গেছে, বেতন বৈষম্য নিরসন দাবিতে বাংলাদেশ হেলথ এ্যাসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় পরিষদ গত ২০ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ২৬ নভেম্বর থেকে এ কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারীরা কর্মবিরতি পালন করেন। ফলে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে অচল অবস্থা চলছিল। যা গর্ভবতি মা ও শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। প্রতিদিন এসব কেন্দ্রে শতশত শিশুকে টিকা দিতে এসে তাদের অভিভাবকদের ফিরে যেতে দেখা যায়। আর এ অচলাবস্থা নিরসনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্টরা দফায় দফায় আলোচনা করে সবশেষে সফল হয়েছেন আন্দোলনরত স্বাস্থ্য সহকারীদের কাজে ফেরাতে।

জানা যায়, চট্টগ্রামে হাম-রুবেলা টিকা ক্যাম্পেইনে লক্ষ্যমাত্রা হলো ১২ লাখ ৭ হাজার ১৪৮ জন শিশু (যাদের বয়স ৯ মাস থেকে ১০ বছরের মধ্যে)। জেলার ১৪ উপজেলার ২০০ ইউনিয়নে ১৬টি স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮২৭টি অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে ক্যাম্পেইনের এ টিকা দেওয়া হবে। আন্দোলনরত স্বাস্থ্য সহকারীরা জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্যর শিকার হচ্ছি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাদের দাবি মেনে নিয়ে চুক্তি করেছেন। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের সাথে আমাদের বেতন বৈষম্য রয়েছে। গাছের, মাছের সেবা দিয়ে, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগীর টিকা দিয়ে তারা আজ ১০ম গ্রেডে আর আমরা শিশুর ১০টি মারাত্বক রোগের বিরুদ্ধে টিকা দান করছি। অথচ আমাদের বেতন ও গ্রেড বৈষম্যের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আন্তরিক নয়।

প্রসঙ্গতঃ গত ২৬ নভেম্বর থেকে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে আসছে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য সহকারীরা। টানা ১৮ দিন কর্মবিরতি পালনের পর গতকাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!