চট্টগ্রাম গণহত্যায় দণ্ডিতদের নিয়ে এক ঝলক

ওড়নায় ঢেকে যায় স্বজনের কষ্ট

কাঁদতে কাঁদতে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া পিতার পিছু নিলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে। সাথে মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ের জামাই মানিক মিয়াও। আদালত ভবনের চারতলা থেকে নিচে নেমে সেই কান্নাই বিলাপে রূপ নিলো। তিনি বললেন, ‘আমার আব্বু নির্দোষ। সেদিন তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না।’ পরে মেয়ের জামাই মানিক মিয়া তার মুখ ওড়নায় ঢেকে দিলেন। মোস্তাফিজুর রহমানের স্বজনরা এসেছিলেন ময়মনসিংহ থেকে।

দণ্ড পাওয়া মমতাজ উদ্দিনের ছেলে মাসুদ পারভেজ। তিনি এসেছেন নেত্রকোনা থেকে। মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘আব্বুর কাছে শুনেছি সেদিন গুলি চালানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে। অথচ আব্বুর ডিউটি ছিল আমতল নামক স্থানে।’

দণ্ড পাওয়া প্রদীপ বড়ুয়ার সাথে আনোয়ারা থেকে এসেছেন তার আত্মীয় সুজন বড়ুয়া। তিনি জানান, ‘রায়টা আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত। আইনজীবীরা যেভাবে পরামর্শ দিবেন সে আলোকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইয়্যেদ মঈনুল আহসান বলেন, ‘অভিযুক্তদের কেউ সেদিন ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। আদালতে আমরা সেদিনের ডিউটি রোস্টারসহ যাবতীয় নথিপত্র উপস্থাপন করেছি। আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’

প্রসংগত, চট্টগ্রাম গণহত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন। ঘোষণার পর রায়কে অভিনন্দন জানিয়ে উপস্থিত আইনজীবীরা এজলাসের বাইরে বারান্দায় মিছিল করেন। সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল ৩ টায় এ মামলার রায় হয়েছে। কাস্টডিতে থাকা ৪ দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত সাবেক পুলিশ সদস্যকে কড়া পুলিশ পাহারায় নিয়ে যাওয়া হয় আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা প্রিজনভ্যানে। তাদের সবাই মুখ ঢাকার চেষ্টা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই পুলিশ সদস্যরা বর্তমান পুলিশের কাঁধে মুখ গুজে কাঁদেনও।

উল্লেখ্য, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৫ আসামির ৪ জন রায়ের সময় আদালতের হেফাজতে উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই জামিনে ছিলেন। রোববার (১৯ জানুয়ারি) সাফাই সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেন। সাফাই সাক্ষ্য শেষে আদালত সোমবার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন। সোমবার আদালতে প্রথম সেশনেই আসামিপক্ষ যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের জন্য সময়ের আবেদন করেন। পূর্ব থেকেই যুক্তি তর্কের সময় নির্ধারিত থাকায় নতুন করে সময় না বাড়িয়ে রায় ঘোষণার সময় নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন। এছাড়া দণ্ডবিধির ৩২৬/৩৪ ধারায় প্রত্যেকের আরও দশ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, কামরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফরিদ উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ রায় বহুল প্রত্যাশিত। দেরিতে হলেও মামলার রায় হয়েছে। তবে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রকিবুল হুদা ও পেট্রোল ইন্সপেক্টর জেসি মণ্ডল যদি বেঁচে থাকতেন এবং এই দণ্ডাদেশ তাদের উপর কার্যকর করা যেতো তবে আমরা বেশি খুশি হতাম।’

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!