কুয়েতে পাপুলকাণ্ডে চট্টগ্রামের কালামের নাম আসছে ঘুরেফিরে

কুয়েতে গ্রেফতার বাংলাদেশের সাংসদ মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে মানবপাচার কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামের বিরুদ্ধেও। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল কুয়েতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পান চট্টগ্রামের এই ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা এসএম আবুল কালাম। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতির দায়িত্ব ছাড়াও ছিলেন অগ্রণী ব্যাংক এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পরিচালকও।

কুয়েতে বাংলাদেশের এমপি কাজী পাপুল গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুদিন আগেও তার পক্ষে সাফাই গেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম। চিঠিতে তিনি বলেছেন, পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘বানোয়াট’।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম লিখেছেন, ‘এমপি পাপুলকে মানব পাচারকারী উল্লেখ করে কুয়েতের গণমাধ্যমগুলোতে যে সংবাদ ছাপা হয়েছে— সেগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এ ব্যাপারে কুয়েতের আরবি দৈনিক আল কাবাস পত্রিকার রিপোর্টারকে আমার দপ্তরে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। সে বলেছে, লোকমুখে শুনে এসব সংবাদ তৈরি করা হয়েছে।’

এদিকে মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব ও অর্থপাচারের অভিযোগে কুয়েতে বাংলাদেশি এমপি পাপুলের গ্রেফতারের যেসব বিস্তারিত তথ্য আসতে শুরু করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, শুধু পাপুল একা নন তার এই অপরাধকর্মে পারস্য উপসাগরীয় দেশটিতে নিযুক্ত ঢাকার রাষ্ট্রদূতও জড়িত থাকতে পারেন।

পাপুলের এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন রাষ্ট্রদূত আবুল কালামের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা জারি করতে বাধ্য হন বলে তাতে দাবি করা হয়েছে। এসব অভিযোগে গত জুনের শুরুতে সাংসদ মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম ওরফে পাপুলকে গ্রেফতার করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সতর্ক করে বলেন, যদি কুয়েত সরকার রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ দায়ের করে তাহলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানব ও অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে চলছে। তারা কোন্ দলের লোক সেটা বিবেচনা করা হবে না। তাদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।’

মিডল ইস্ট মনিটর লিখেছে, চলতি মাসেই রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালামের মেয়াদ শেষ হবে। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এরপর তাকে বাংলাদেশে ফিরতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘কুয়েতে পরবর্তী রাষ্ট্রদূত কে হতে যাচ্ছেন— তা চূড়ান্ত করেছি আমরা।’

গত ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সাংসদ পাপলুকে গ্রেফতার করে। ওই সময় গালফ নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের সরকারি আইনজীবীরা তিনটি অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগগুলো হলো মানবপাচার, অবৈধ মুদ্রা পাচার এবং স্বদেশী কর্মীদের কাছে রেসিডেন্ট পারমিট বিক্রি।

পাঁচ বাংলাদেশি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর পাপুলকে গ্রেফতার করা হয়। ওই বাংলাদেশিরা জানান, পাপুল তাদের কুয়েতে পাঠানোর জন্য প্রত্যেকের কাছে সোয়া আট লাখেরও বেশি করে টাকা নিয়েছেন। এছাড়া রেসিডেন্সি ভিসা নবায়নের জন্য প্রতিবছর পাপুলকে নতুন করে অর্থ প্রদান করতে হতো তাদের।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি কুয়েতে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ হিসাবে পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি সরবরাহ করেছিলেন, যাতে তিনি সেখানে যে সংস্থাটি চালাচ্ছিলেন তার চুক্তি পেতে পারেন।

কুয়েতের গণমাধ্যমও তার বিরুদ্ধে ভিসা বাণিজ্য ও অবৈধ অর্থপাচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সেই অর্থ পাঠানোর অভিযোগ তুলেছে। একটি সূত্রের বরাতে মিডল ইস্ট মনিটর জানিয়েছে, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন তিন সদস্যের মধ্যে একজন বাংলাদেশি এমপি রয়েছেন, যার স্ত্রীও একজন এমপি (সংরক্ষিত আসনের)।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!