চট্টগ্রাম এবারও ডুববে কিনা নির্ভর করছে ২২ স্পটের ওপর

চট্টগ্রাম নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করোনায় পিছালেও দুর্ভোগমুক্ত রাখার আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। মার্চের শেষ দিক থেকে কাজ বন্ধ থাকলেও জুনে লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সদস্যরা।

নগরীকে চার ভাগে ভাগ করে এবার আটটি টিমে কাজ করছেন তারা। চারটিতে ২৫ জন করে ১০০ জন সদস্য রাখা হয়েছে। আর চারটিতে ১০ জন করে সদস্য রাখা হয়েছে, যারা ‘কুইক রেসপন্স টিম’ হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে নতুন ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার সাইড ড্রেন বা নালা নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি পুরাতন ড্রেনের ৫২ দশমিক ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৫ কিলোমিটার অংশের গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়িয়ে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারকে মূল ধরে উত্তর ও দক্ষিণ দুই জোন, আগ্রাবাদ-হালিশহর-পতেঙ্গা এলাকাকে একটি জোন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-ফিরিঙ্গিবাজারকে নিয়ে আরেকটি জোন ভাগ করা হয়েছে।

জোন ১
নাসিরাবাদ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, বাকলিয়া, চান্দগাঁও।
জোন ২
শুলকবহর, বাদুরতলা, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, রাহাত্তারপুল, ওয়াসা।
জোন ৩
শান্তিবাগ, আগ্রাবাদ, হালিশহর।
জোন ৪
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মিয়াখান নগর, ফিরিঙ্গিবাজার

সে হিসেবে একটি জোনে রয়েছে নাসিরাবাদ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, খাজা রোড, বাকলিয়া, চান্দগাঁও। আরেকটি জোনে আছে শুলকবহর, বাদুরতলা, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, রাহাত্তারপুল, ওয়াসা। শান্তিবাগ, আগ্রাবাদ, হালিশহর নিয়ে একটি জোন। দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মিয়াখান নগর, ফিরিঙ্গিবাজার এলাকা নিয়ে আরেকটি জোন।

চট্টগ্রাম এবারও ডুববে কিনা নির্ভর করছে ২২ স্পটের ওপর 1

প্রকল্পের পরিচালক সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল শাহ আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত বর্ষায় আমরা দেখেছি চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, বাদুরতলা, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, রাহাত্তারপুল, খাজা রোড, বাকলিয়া, শান্তিবাগ, ওয়াসা, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ, অক্সিজেন, হালিশহর, আছদগঞ্জ, মিয়াখান নগর, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জসহ ২২টি স্পটে পানি জমে থাকে। আমরা এসব এলাকায় পানি জমে থাকার কারণ নির্ণয় করে প্রতিকারের পদক্ষেপ নিয়েছি।’

‘তারই অংশ হিসেবে এবার বর্ষা শুরুর আগেই সিটি কর্পোরেশনের ৪১ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করেছি। সেই আলোকে ২৪০ কিলোমিটার ড্রেনের আবর্জনা পরিষ্কার করেছি। যার ফলে এসব ড্রেন দিয়ে দ্রুত পানি খালে চলে যাবে। খালগুলোকে খনন ও পরিষ্কার রাখছি। এরপরও যেখানে ময়লা, আবর্জনায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে আমরা ফোন পাওয়ার সাথে সাথেই তা অপসারণ করছি’— যোগ করেন এই সেনা কর্মকর্তা।

লে. কর্নেল শাহ আলী আরও বলেন, ‘নগরীর ড্রেনেজ সিস্টেমের চলমান ড্রেনগুলোর প্রস্থ ও গভীরতা বাড়িয়ে ৫২ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার নতুন ড্রেন তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৩৫ কিলোমিটারের বেশি ড্রেন ব্যবহার হচ্ছে। আর বাকি অংশ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। এছাড়াও যেসব এলাকায় কোনো ড্রেনই ছিল না সেখানে আমরা ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছি করোনার লকডাউনের আগেই।’

চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প ২০১৭ সালে একনেকে পাস হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তত্ত্বাবেধানে সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়।

তবে বিভিন্ন সময় দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেছেন, কোন রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। যে কারণে একনেকে পাস হওয়ারও প্রায় একবছর পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। দেরিতে শুরু হলেও সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় তা নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হতো। কিন্তু করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাজ থেমে থাকে প্রায় তিন মাস।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!