অভিযান চালানোর বরাদ্দ নেই, চট্টগ্রামে ৩০০ কোটির বেদখল জমি উদ্ধারে নিষ্ক্রিয় সওজ

উচ্ছেদ নিয়ে কর্মকর্তাদের ভিন্নমত

চট্টগ্রামে বেদখল হওয়া ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি উদ্ধার হচ্ছে না। ৩০ বছর ধরে বেহাত হওয়া ওই আট একর জমি উদ্ধার করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না জমির মালিক সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ফলে অবৈধ দখলদারদের কব্জায় রয়ে গেছে সরকারি জমি।

যদিও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সওজ অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা কথা বলেছেন। কিন্তু সওজের চট্টগ্রাম জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেছেন ভিন্ন কথা। ওই জমি উদ্ধারে অভিযান চালানোর বরাদ্দ পেলেই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ নিয়ে সওজ কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। এতে সুবিধা পাচ্ছে অবৈধ দখলদাররা।

সিটি গেট এলাকায় বেহাত হয়ে যাওয়া ওই জমির নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলী মৌজার ১৪২৬ ও ১৪২৮ নম্বর দাগ অনুযায়ী ৮ একরের বেশি জমি রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সওজ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই অবৈধভাবে দখলদাররা গড়ে তুলেছে পাকা স্থাপনা। সওজ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা মাসিক মাসোহারা আদায় করে দখলদারদের কাছ থেকে। প্রতি দোকান থেকে তারা ১২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে। এতে প্রতি মাসে ১৫ লাখের বেশি টাকা যায় কর্মকর্তাদের পকেটে। আর এসব কাজের নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিটি গেটের আগে থেকে সিডিএ ১ নম্বর পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে দোকান রয়েছে ১১৭টি। এই জমিতে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০টির বেশি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে ওই জায়গায়। শুধু ফার্নিচারের দোকানই রয়েছে ১১৭টি। এর প্রায় সবই ফার্নিচারের দোকান। দোকানের পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব গোডাউন বা কারখানা।

স্থানীয়রা জানান, সরকারের এই জমি দখল করে আছে প্রভাবশালীরা। ১৫০টির বেশি স্থাপনা রয়েছে সেখানে। তাদের বিরুদ্ধে সওজ অধিদপ্তরে কোনো অভিযোগ গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তা ধামাচাপা দেন কর্মকর্তারা। দখলদারদের উচ্ছেদ করে ওই জমিতে জনকল্যাণমুখি প্রকল্প করা দরকার।

এর আগে সরকারি জমি দখল নিয়ে ‘চট্টগ্রামে ৩০০ কোটি টাকার সরকারি জমি গিলে খাচ্ছে দখলবাজ চক্র, সওজ মাসে চাঁদা খায় ১৫ লাখ’—শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনে। এরপর নড়েচড়ে বসে সওজ কর্তৃপক্ষ। সার্ভেয়ারসহ সওজ চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা ওই জমি পরিদর্শনে যান।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সওজ অফিসের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জমি উদ্ধার করে সেখানে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জন্য জমিটি প্রয়োজন হবে। ওই জমিতে টার্মিনাল করার পরিকল্পনাও আছে।’

বিস্তারিত জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমার সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন তিনি।

সওজ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সার্ভেয়ারসহ আমরা ওই জমি পরিদর্শন করেছি। এই জমি নিয়ে এখন আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। শুনেছি অধিগ্রহণের পর থেকে ওই জমি বেদখল হয়ে আছে।’

জমি উদ্ধারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি একার পক্ষে তো উচ্ছেদ অভিযান করা সম্ভব না। অভিযান চালাতে যে ব্যয় প্রয়োজন, সেটি পেলে অভিযান করা যাবে। উদ্ধার করে ওই জমি খালি রাখলে আবারও দখল হয়ে যাবে। পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

আরএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!