চট্টগ্রামে ৩০০ কোটি টাকার সরকারি জমি গিলে খাচ্ছে দখলবাজ চক্র, সওজ মাসে চাঁদা খায় ১৫ লাখ

নির্বাহী প্রকৌশলী নাকি ‘জানতেনই না’

চট্টগ্রামে ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি গিলে খাচ্ছে দখলদাররা। নগরীর সিটি গেইট এলাকার আট একরেরও বেশি জমি বেদখল হয়ে আছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। ওই জমির মালিক সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরও রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে দখলদারদের সুবিধা পাইয়ে দিতে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা প্রতি দোকান থেকে তারা ১২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা প্রতি দোকান থেকে তারা ১২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সরাসরি যোগসাজশেই জমি দখল করে দখলদাররা গড়ে উঠেছে পাকা স্থাপনা। অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ফার্নিচার মার্কেট। ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১৫০টির বেশি অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে ওই জায়গায়। শুধু ফার্নিচারের দোকানই রয়েছে ১১৭টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। উল্টো ওই অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অফিসের কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোহারা দিয়ে চলছে এই অবৈধ দখলদারিত্ব।

সিটি গেইট এলাকায় বেহাত হয়ে যাওয়া ওই জমির নথিপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, পাহাড়তলী থানার উত্তর কাট্টলী মৌজার ১৪২৬ ও ১৪২৮ নম্বর দাগ অনুযায়ী ৮ একরের বেশি জমি রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে এই জমির মালিক সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। অথচ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা ‘জানতেন না’ বিষয়টি।

অভিযোগ রয়েছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা মাসিক মাসোহারা আদায় করে দখলদারদের কাছ থেকে। প্রতি দোকান থেকে তারা ১২ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করে। এতে প্রতি মাসে ১৫ লাখের বেশি টাকা যায় কর্মকর্তাদের পকেটে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিটি গেইটের আগে থেকে সিডিএ ১নং পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে দোকান রয়েছে ১১৭টি। এর প্রায় সবই ফার্নিচারের দোকান। দোকানের পাশাপাশি রয়েছে নিজস্ব গোডাউন বা কারখানা। এসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে সরকারি জমিতে।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারের এই জমি দখল করে আছে প্রভাবশালীরা। ১৫০টির বেশি স্থাপনা রয়েছে সেখানে। তাদের বিরুদ্ধে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরে কোনো অভিযোগ গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তা ধামাচাপা দেন কর্মকর্তারা। দখলদারদের উচ্ছেদ করে ওই জমিতে জনকল্যাণমুখী প্রকল্প করার দাবি স্থানীয়দের।

এ বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমাকে ফোন করা হয় ১৩ মার্চ। ওই সময় তিনি বলেন, ‘এই জমি আমাদের কি-না জানি না। আগে দাগ-সিট দেখে নিশ্চিত হতে হবে জমির মালিক কে।’

দোকান থেকে মাসিক মাসোহারা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হন তিনি। প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘রোডস এন্ড হাইওয়ে কর্মকর্তাদের কি ক্ষমতা আছে যে, আট একর জায়গায় একর দখলে যোগসাজশ করবে?’

এর দুদিন পর বুধবার (১৫ মার্চ) যোগাযোগ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ওই জমি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। বিস্তারিত না জেনে কিছু বলতে পারবো না।’

এ বিষয়ে জানতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম জোন) মো. আতাউর রহমানকে কল দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোডের জন্য এই জমি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে অধিগ্রহণ করে দেওয়া হয়েছে। এই জমির মালিক এখন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। মালিক যদি দখলদারদের উচ্ছেদ করতে আমাদের সহযোগিতা চায়, আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!