হাজার টাকার কাঁকড়া এখন ৫০ টাকা মাত্র!

৫ মাস ধরে রপ্তানি বন্ধ থাকার ফল

করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন রপ্তানি বন্ধ থাকায় ১ হাজার টাকার কাঁকড়া এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। রপ্তানি বন্ধ হওয়ার পর চরম সংকটে পড়েছেন কাঁকড়া চাষী ও ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন প্রজেক্টে পুঁজি বিনিয়োগ করলেও এখন মূলধনও উঠে না বলে জানান তারা।

মৎস্য বিভাগ জানায়, কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ করা ৮০ ভাগ জীবিত কাঁকড়া রপ্তানি হয় চীনে। এছাড়াও সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, ব্যাংকক, হংকং, মালয়েশিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে চীনে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকার মত কক্সবাজারের কাঁকড়া রপ্তানিতেও ধ্বস নেমেছে। বিপাকে পড়েছেন এখানকার চাষিরা। গত ৫ মাসে রপ্তানি ছিল পুরোপুরি বন্ধ। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও কাঁকড়ার চাহিদা না থাকায় তা খুব কম দামে বিক্রি হয়।

কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলার বেশ কিছু এলাকার চিংড়ি প্রজেক্টে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে কাঁকড়া উৎপাদন হয়। যার বেশীরভাগ অংশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ৬ উপজেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার কাঁকড়া উৎপাদন ও সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। উৎপাদিত কাঁকড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন ডিপো থেকে ঝুড়ি ভর্তি হয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখান থেকে সরাসরি বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। চীনে করোনার প্রভাবের কারণে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। আগে কাঁকড়ার প্রতি কেজি বিক্রি হতো সর্বোচ্চ ১২/১৪শ টাকায়। এখন বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কাঁকড়া সরবরাহকারী সমিতির সভাপতি তৈয়ব উল্লাহ বলেন, ‘রপ্তানি বন্ধ থাকার কারণে চাষী থেকে ব্যবসায়ী সবাই বিপাকে পড়েছে। চাষীদের পুঁজির টাকাটাও উঠে আসেনি। এখন মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত আসার আর কোন সুযোগ নেই। কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে যে দেশগুলোতে এখন কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে সেসব দেশে রপ্তানি আরও বাড়াতে হবে। এছাড়া কাঁকড়া চাষী ও ব্যবসায়ীদের ঋণ সুবিধা দিয়ে ব্যবসায় টিকিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এই খাতটি আগামিতে স্থবির হয়ে যাবে। পুঁজির অভাবে কেউ কাঁকড়ার চাষ আর করতে পারবে না। ’

এদিকে কাঁকড়া সরবরাহকারী সমিতির কক্সবাজার জেলা সভাপতি শান্তি লাল নন্দী বলেন, ‘আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। সরকারের ঋণ সুবিধা ছাড়া পুনরায় কাঁকড়া চাষ কিংবা ব্যবসা করা অনেক দুরূহ হয়ে পড়েছে। আমরা এরমধ্যে রপ্তানিকারকদের সাথে কয়েক দফা আলোচনাও করেছি। সরকার চাইলে রপ্তানি আরও বাড়ানো যায়। চীন ছাড়াও অন্যান্য অনেক দেশ আছে যেখানে আমরা কাঁকড়া রপ্তানি করতে পারি। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় তবে তা সহজেই বাস্তবায়ন হবে।’

বাংলাদেশ কাঁকড়া রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, ‘চীনে রপ্তানি শুরু করতে আমরা জোর তৎপরতা চালাচ্ছি। এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও যোগযোগ করা হয়েছে। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি আমরা চূড়ান্ত কিছু জানতে পারব। ’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!