সিএনজিতে হারানো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঢাবি ছাত্রের টাকা উদ্ধার করে দিল বন্দর থানা

৫ ঘন্টায়ও স্বীকার করতে চায়নি ট্যাক্সিচালক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম বিরিয়ানি নিয়ে বেড়াতে যান ফুফুর বাসায়। চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদের চৌমুহনী ফায়ার সার্ভিসের সামনে থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করেন বন্দর এলাকার মাইজপাড়া পর্যন্ত। গন্তব্যে পৌঁছে তিনি নেমে পড়েন অটোরিকশা থেকে। কিন্তু ভুলে গাড়িতে ফেলে আসেন মানিব্যাগ। সেই ব্যাগে ছিল ৬৩ হাজার ৫০০ টাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। এতগুলো টাকা হারিয়ে হতভম্ব রবিউল শরণাপন্ন হন বন্দর থানায়। পরে বন্দর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তিনি ফিরে পান তার টাকাসহ ব্যাগ।

এমনটি ঘটেছে গত শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) এবং ওইদিনই পুলিশ টাকাসহ ব্যাগ উদ্ধার করে। কিন্তু এই ঘটনা এতটুকুতে শেষ হলেও এর পেছনে ছিল আরেক ঘটনা।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রবিউলের (২৩) টাকাসহ ব্যাগ উদ্ধারে বেশ বেগ পেতে হয়েছে পুলিশকে। তবে এই কাজে ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউলের ভূমিকার প্রশংসায়ও পঞ্চমুখ পুলিশ।

অটোরিকশা চালককে ৫ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ
ঘটনার বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, ‘শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে আমার কাছে একটা ফোন আসে, অপরপ্রাপ্ত থেকে ফোনে পরিচয় দিয়ে রবিউল বলেন, তারা টাকা হারানো গেছে। আমি বলি, আপনি যদি সিএনজি অটোরিকশার নম্বর বলতে পারেন, তবে আমাদের জন্য কাজটি সহজ হবে। তারপর রবিউল বলেন, আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এরপর আমি আমার মতো অনুসন্ধান শুরু করলে ৩০ মিনিট পর রবিউল নিজ থেকে অটোরিকশার একটি ভিডিও ফুটেজ আমাকে পাঠান। এতে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা অটোরিকশাকে শনাক্ত করে ড্রাইভার ও গাড়ির মালিককে খুঁজে পাই।’

তিনি বলেন, ‘এরপর অটোরিকশার চালককে জানানো হলে তিনি কোনো টাকা পাননি বলে জানান। পরে থানায় এনে পুলিশের টানা ৫ ঘণ্টারও বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদের পর চালক টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।’

ওসি সঞ্জয় বলেন, ‘ওই চালক প্রথমে জানান, রবিউলকে নামিয়ে দেওয়ার পর তিনি আরও যাত্রী তুলেছেন গাড়িতে। হয়ত অন্য যাত্রীরা টাকাটা নিতে পারে। চালকের কথায় সন্দেহ হলে আমরা তাকে যেই যেই স্পটে যাত্রী ওঠানামা করিয়েছেন, সবগুলোর ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। কিন্তু গাড়ির মালিক দাবি করেন, চালকের দেখানো গাড়িটি এই গাড়ি না। তাই আমাদের সন্দেহ আরও বাড়তে থাকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে চালক জানান, তিনি দুপুরে ভাত খাননি। তাই আমরা তার থেকে নম্বর নিয়ে তারই ঘরে ফোন করে কথা বলি। কিন্তু চালকের পরিবার জানায়, তিনি দুপুরে ঘরে এসে ভাত খেয়েছেন। এরপর চালকের কথা মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার পর নিজ ঘরে ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা লুকানো আছে বলে স্বীকার করেন তিনি।’

চালককে জিম্মায় ছাড়িয়ে নেন রবিউল
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও অন্য ১০ জন থেকে আলাদা রবিউল। তাৎক্ষণিক বুদ্ধি অনেক বেশি তার। নিজের অক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য নিজ উদ্যোগেই ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেন রবিউল।

এছাড়া সিএনজি চালক টাকাগুলো চুরির চেষ্টা করার পরও থানায় কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি রবিউল। এমনকি পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করার কথা বলা হলেও নিজ জিম্মায় ড্রাইভারকে ছাড়িয়ে নেন রবিউল।

রবিউলের এমন আচরণে মুগ্ধ ওসি সঞ্জয় বলেন, ‘তিনি (রবিউল) শুধু একজন ট্যালেন্ট স্টুডেন্ট না, একজন বড় মনের মানুষও। না হয় এতবড় একটা ক্ষতি যে লোকটা করতে চেয়েছিল, তাকে শাস্তি না দিয়ে নিজের জিম্মায় মুক্ত করতেন না। দৃষ্টি শক্তি থাকলেও আমরা অনেকেই রবিউলের চেয়ে কম দেখি। তিনি চোখ দিয়ে নয়, জ্ঞান দিয়ে দেখছেন পৃথিবী।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!