সাতকানিয়ায় মোতালেবের পক্ষে হঠাৎ ‘বিবৃতি’, কথিত স্বাক্ষরদাতাদের অনেকে জানেই না

‘এই ধরনের বিবৃতি বঙ্গবন্ধুকন্যাকে অপমানের শামিল’

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় ‘এমপি’ হিসেবে দেখতে চেয়ে পয়দা হচ্ছে একের পর এক ‘বিবৃতি’। সেই ‘বিবৃতি’ নিয়ে আবার চলছে নানা নাটক। বিবৃতিতে কথিত স্বাক্ষরদাতা অনেকে এ নিয়ে তুলছেন ‘প্রতারণা’র অভিযোগ। কেউ কেউ চক্ষুলজ্জায় বিষয়টি চেপে যেতে চাইলেও অনেকে বলছেন, তাদের না জানিয়েই বিবৃতিতে তাদের নাম তুলে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই মনোনয়ন বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্তে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা জানিয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ২৩ জন জ্যেষ্ঠ নেতা পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন, দলীয় সভানেত্রী যাকে উপযুক্ত মনে করেন, তাকে মনোনয়ন দেবেন। এখানে কারও সুপারিশ-বিবৃতির প্রয়োজন নেই।

খাদ্যপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বনফুলের মালিক এমএ মোতালেবকে তৈরি হয়েছে জোর বিতর্ক। ১৮০ জন নেতাকর্মী এই ব্যবসায়ীকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার এমপি হিসেবে দেখতে চান বলে যে বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে, সেটা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। ওই বিবৃতিতে থাকা বেশিরভাগ নেতাকর্মীর নাম তাদের না জানিয়েই তুলে দেওয়া হয়েছে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার অনেক প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছেন, এই ধরনের ‘বিবৃতি’ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে অবজ্ঞা ও অপমানের শামিল। কারণ মনোনয়ন বিষয়ে সভানেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তাকে ‘সুপারিশ’ বা ‘পরামর্শ’ দেওয়ার সামান্যতম যোগ্যতাও কি এইসব বিবৃতিবাজ নেতাকর্মীদের আছে?

এদিকে সাতকানিয়া উপজেলার নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সাতকানিয়ার ইউনিয়ন পর্যায়ের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা মোতালেবের পক্ষে দেওয়া ওই বিবৃতির বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছেন। পাল্টা ওই বিবৃতিতেও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নির্বাচনে কে মনোনয়ন পাবেন— তা নির্ধারণের এখতিয়ার কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার।’

সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার ২৩ জন সিনিয়র নেতা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে মনোনয়ন নিয়ে তারা কেউই কোনো ব্যক্তির পক্ষ নিয়ে বিবৃতি বা সুপারিশ প্রদান করেননি। তারা দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এর আগে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ মোতালেবকে ১৮০ জন নেতাকর্মী এমপি হিসেবে দেখতে চান শিরোনামে যে বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, ওই বিবৃতিতে নাম থাকা কয়েকজন ছাড়া বাকি কেউই কোনো স্বাক্ষর করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে৷

এর পরপরই সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২৩ জন সভাপতি-সাধারণ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বরাবর একটি লিখিত চিঠি প্রদান করেন।

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে স্বাক্ষরসহ ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া- লোহাগাড়া) আসনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী যথাক্রমে— আমিনুল ইসলাম আমিন, ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, আবু সুফিয়ান, মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী এবং এমএ মোতালেবসহ অন্যান্য আরও যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী আছেন তাদের মধ্য থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে উপযুক্ত মনে করে মনোনয়ন দেবেন আমরা তাঁর পক্ষে কাজ করে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।’

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা মেনে মনোনয়ন বিষয়ে আমরা কারও পক্ষাবলম্বন বা কারও পক্ষে-বিপক্ষে কোনো সুপারিশ বা বিবৃতি প্রদান করি নাই। আমাদের আস্থার ঠিকানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা। আশা করি উনি তৃণমূলের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাবেন।’

মনোনয়ন বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্তে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা জানিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন— সোনাকানিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ হোছাইন ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ঢেমশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক রেদোয়ান উদ্দিন, এওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, ছদাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, কালিয়াইশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হাকিম চৌধুরী, আমিলাইশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর, মাদার্শা ইউনিয়ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হামিদ সিকদার, চরতি ইউনিয়ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাকিম চৌধুরী, খাগরিয়া ইউনিয়ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ আজগর চৌধুরী, নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মিয়া, কাঞ্চনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান খোকন ও হাসান মুরাদ লিটন, পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক হাসান মুরাদ আবু ও যুগ্ম আহবায়ক মঈনুদ্দিন পারুল, কেওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রিপন দাশ সুজন, বাজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন এবং সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক এনামুল হক প্রমুখ।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!