সাতকানিয়ায় চলছে নিষ্ঠুরতা, এবার মাঝরাতে অপহরণ করে ছাত্রলীগ সভাপতিকে থেঁতলে দেওয়া হল

আওয়ামী লীগ পেলেই পেটাচ্ছেন চরতীর মেম্বার সাইফুল

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার চরতী ইউনিয়নে একের পর এক হামলার শিকার হচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসব নেতাকর্মী বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছিলেন। হামলায় অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, আবার অনেকে এখনও চিকিৎসা নিচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

এদের একজন চরতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান। যাকে বুধবার (২৭ মার্চ) গভীর রাতে বাড়ি থেকে অপহরণের পর গাছের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে শরীর থেতলে ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় মো. মানিক নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকেও কোমরে, পিঠে, ঘাড়ে কোপায় হামলাকারীরা। হামলাকারীরা সকলেই চরতী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. সাইফুলের অনুসারী বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বুধবার রাত ১টার দিকে চরতী ইউনিয়নের তালতলা এলাকা থেকে মাঈনুদ্দিনকে অপহরণ করা হয়। পরে ভোর ৪টার দিকে চরতী ইউনিয়ন ব্রিজের নিচ থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।

জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে চরতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসানকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তাকে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায় তারা। ভোর ৪টার দিকে বেধড়ক পিটিয়ে চরতী ইউনিয়নের একটি ব্রিজের নিচে ফেলে দেয় অপহরণকারীরা।

মাঈনুদ্দিনের ঘাড়, পিঠ, কোমর থেঁতলে দেওয়া হয় বলে জানায় মাঈনুদ্দিনকে উদ্ধারকারী আত্মীয়রা। তারা এ সময় মাঈনুদ্দিন হাসানের কাছ থেকে এ ঘটনায় মামলা না করার মুচলেকা নেয়। পরে তার কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়।

এ সময় মো. মানিক নামের এক ছাত্রলীগ নেতার ওপরও সশস্ত্র হামলা হয়েছে। রাত ২টার দিকে চরতী ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় তার ওপর হামলা করা হয়। আহত মানিকের পিঠে ও কোমরে ছুরিকাঘাত করা হয় বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

আহত মানিক ও অপহরণের শিকার মাঈনুদ্দিন হাসান সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

ঘটনার বিষয়ে আবু রেজা নদভী বলেন, ‘চরতী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান ও ছাত্রলীগ নেতা মানিক বিগত সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে এলাকায় কাজ করেছিল। তখন থেকেই প্রতিপক্ষের লোকজন এই দুই ছাত্রলীগ নেতাকে দফায় দফায় হুমকি দিচ্ছিল এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা এলাকাতেই অবস্থান করছিল। সে ক্ষোভ থেকে চরতী ইউনিয়নের সন্ত্রাসী সাইফুল মেম্বার ও তার লোকজন বুধবার রাত ২টার দিকে ঘর থেকে বের করে মানিকের পিঠে, কোমরে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি এগিয়ে এলে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় চরতীর একটি ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। সাইফুল মেম্বারসহ তার সন্ত্রাসীরা এই ছাত্রলীগ নেতার ঘাড়, পিঠ ও কোমর থেতলে দেয়।’

এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানাকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান সাবেক এই সংসদ সদস্য।

স্থানীয়রা জানান, গুরুতর আহত হওয়ায় ছাত্রলীগ নেতা মাঈনুদ্দিন ও মানিককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকারকে একাধিকবার কল করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি চরতী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সাইফুলের অনুসারী হামলা চালিয়ে চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনা সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের হয়।

গত ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় চরতী ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর গণসংযোগে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য সাইফুলের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে সাতকানিয়া থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান এবং চরতী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল্লাহ চৌধুরী গুরুতর আহত হয়েছেন। এ গণসংযোগে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী।

এছাড়া গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠে এই সাইফুলের অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!