সকালে দুর্ব্যবহার, রাতেই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু সিভাসুর গাড়িচালকের

পরিবারের কাজে ব্যবহৃত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) এক গাড়িচালকের আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। তার সহকর্মীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও তার স্ত্রীর প্রচণ্ড দুর্ব্যবহারের কারণে ওই গাড়িচালক প্রচণ্ড মানসিক চাপে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

প্রক্টর ও তার স্ত্রীর দুর্ব্যবহারের ঘটনার জের ধরে বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে বৈঠকে বসেছিলেন সিভাসুর পরিবহন পুলের কর্মচারী ও চালকরা। এতে উপস্থিত ছিলেন ঘটনার শিকার গাড়িচালক বাদল চন্দ্র মজুমদারও।
প্রক্টর ও তার স্ত্রীর দুর্ব্যবহারের ঘটনার জের ধরে বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে বৈঠকে বসেছিলেন সিভাসুর পরিবহন পুলের কর্মচারী ও চালকরা। এতে উপস্থিত ছিলেন ঘটনার শিকার গাড়িচালক বাদল চন্দ্র মজুমদারও।

বাদল চন্দ্র মজুমদার নামে ওই গাড়িচালক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিনের গাড়িচালক ছিলেন।

জানা গেছে, বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে সিভাসুর প্রক্টরের গাড়িচালক বাদল চন্দ্র মজুমদার আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ওইদিন রাত নয়টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। রাত দেড়টার দিকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে তার লাশ নিয়ে পরিবারের লোকজন গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

বাদলের সহকর্মীরা অভিযোগ করেন, প্রক্টর ও তার স্ত্রীর দুর্ব্যবহারের কারণেই বাদল হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়াও বাদলের সহকর্মীদের কাছ থেকে জানা গেছে, সিভাসুর প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও তার স্ত্রী গাড়িচালক বাদলের সঙ্গে প্রচন্ড দুর্ব্যবহার করেন। এর জের ধরে বুধবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে বৈঠকেও বসেছিল সিভাসুর পরিবহন পুলের কর্মচারী ও চালকরা। ওই বৈঠকের একটি ছবি চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

বৈঠকে উপস্থিত এক গাড়িচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাদল দাদা পরিবহন পুলের সবচেয়ে পুরানো চালক। ২৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। স্ত্রী পরিবার নিয়ে ভার্সিটির স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন।’

ওই গাড়িচালক বলেন, ‘বাদল দাদা প্রক্টরের গাড়ি চালাতেন। প্রক্টরের ব্যক্তিগত কাজেও তাকে ব্যবহার করা হতো। বুধবার সকালে প্রক্টরের মেয়েকে স্কুল থেকে এনে বাসার গলির মুখে নামিয়ে দিয়েছিলেন। এটি নিয়ে প্রক্টরের স্ত্রী নাকি তাকে গালিগালাজ করেছেন। পরে দুপুরে বাসায় যাওয়ার পর ফোনে আবার তাকে গালিগালাজ করেন প্রক্টর। তখন তিনি লাউড স্পিকারে ছিলেন। তার ছেলে-স্ত্রী এসব গালিগালাজ শুনেছে।’

ঘটনার বিবরণ দিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ওই গাড়িচালক বলেন, ‘এরপর তিনি আমাদের সবাইকে ডাকেন। বিষয়টি তিনি কোনোভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে আমাদের জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেন। আমরা তাকে সান্ত্বনা দিই। তখন সবাই একসঙ্গে বসেছি। আমরা তখন অফিস সহকারীর মাধ্যমে ভিসিকে জানিয়েছি। প্রক্টর স্যার না হয় রাগের মাথায় কিছু বলতে পারেন। কিন্তু তার স্ত্রী কিভাবে গালিগালাজ করেন? এরপর তো সন্ধ্যায় তিনি প্রক্টরের বাসায় ডিউটিতে যান। প্রক্টরের বাসা জালালাবাদ এলাকায়। সেখানে তিনি স্ট্রোক করেন। ৯টার দিকে তাকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি সিভাসু কর্তৃপক্ষ ধামাচাপা দিতে চাইছে জানিয়ে পরিবহন পুলের আরেক কর্মচারী বলেন, ‘দেড়টায় মারা যাওয়ার পর সাড়ে তিনটার মধ্যে লাশ নিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২৭ বছর যে ক্যাম্পাসে চাকরি করলো, সেখানকার সহকর্মীদের দেখার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এটা করা হয়েছে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। আমাদের কথা হল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন পুলের গাড়ি কেন প্রক্টরের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার হবে।’

সিভাসুর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘অভিযোগটি শুনেছি। এটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আলোচনা সমালোচনা চলছে। এটা খুব দুঃখজনক একটা ঘটনা। তাছাড়া ভিসি ছাড়া আর কারও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি সার্বক্ষণিক বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের সুযোগ নেই। এখন বিষয় হল পরিবার বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ না করলে তো এই বিষয়ে কথা বলার সুযোগ নেই।’

এই বিষয়ে কথা বলতে বাদল মজুমদারের ছেলে শান্ত মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বাবার লাশ সৎকার নিয়ে ব্যস্ত আছি। শহরে ফিরে কথা বলবো।’

এদিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে জড়িয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে, তা সব বানানো। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে কোন একটা গোষ্ঠী আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এসব কথা ছড়াচ্ছে। আমার স্ত্রীর সাথে গাড়িচালকের কোন কথাই হয়নি। প্রতিদিন আমার মেয়েসহ আরও তিনজনকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যান গাড়িচালক বাদল। তাহলে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন? আর আমি তো চট্টগ্রামে ছিলামই না। বুধবার ভোরে ঢাকা থেকে আমি চট্টগ্রামে আসছি।’

ড. মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমি বাদলের ছেলের কাছ থেকে যা শুনেছি, সে ৪-৫ বছর যাবত হৃদরোগে আক্রান্ত। নিয়মিত সে হৃদরোগের ওষুধ খেয়ে আসছে। হৃদরোগ থেকেই বাদল চন্দ্র স্ট্রোক করেছেন। ঘটনাটিকে অন্যখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেটা খুবই দুঃখজনক।’

ঘটনার বিষয়ে সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. এএসএম লুৎফুল আহসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারবো না। আপনার কিছু জানার থাকলে জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি সার্বক্ষণিক বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের সুযোগ আছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি ফোন কেটে দেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!