লাইভে এসে লোহাগাড়ার ওসিকে সাবেক এমপিপুত্রের হুঙ্কার (ভিডিও)

‘নদভী, কসাই বাবুল বাঁচাতে পারবে না’

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফেসবুক লাইভে এসে ‘হুমকি’ দিয়েছেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সাংসদ মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর ছোট ছেলে এটিএম রিংকু চৌধুরী। আমেরিকায় অবস্থান করা সাবেক এই এমপিপুত্র তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে আইডিতে এমন ‘কাণ্ড’ ঘটান।

এটিএম রিংকু চৌধুরীর বাবা মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী ১৯৭৯ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে তিনি মারা যান। পাঁচ ছেলের মধ্যে সবার ছোট রিংকু।

সম্প্রতি ‘শাহাদাত চৌধুরী রিংকু’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে পুলিশ প্রশাসন, সরকার এবং লোহাগাড়া থানার ওসি ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি। এছাড়াও বিএনপিকর্মীদের হয়রানি করার কারণে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ওসিকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন এই সাংসদপুত্র।

৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওটিতে রিংকু ওসি রাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে লোহাগাড়া এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগ করেন। ক্ষমতায় এলে ওসি রাশেদকে পুনরায় লোহাগাড়া থানায় এনে বিচারের হুমকিও দেন রিংকু।

ভিডিওতে রিংকু ওসিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আমি লোহাগাড়ার পুলিশ প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আগে আপনারা আপনাদের সংবিধানে কী আছে তা ভালোভাবে পড়বেন। আপনারা অহেতুক বিরোধীদলকে গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন, আমি লোহাগাড়া থানার ওসিকে বলছি। আপনারা দয়া করে আমার এই ভিডিওটা ওনার কানে পৌঁছানোর মতো সহযোগিতা করবেন। যেভাবে আপনি হয়রানি করছেন, আজকের এইদিনে এই জিনিসটা আপনার ডায়রিতে লিখে রাখেন। আজকের দিনে একজন সাবেক সাংসদের ছেলে হয়ে আমি আপনাকে এই কথা বলছি। আপনি গায়েবি মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে দমন করছেন কার জন্য? শেখ হাসিনার জন্য? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য? যদি আপনার মা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি ক্ষমতায় না থাকে, তাহলে আপনি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, আপনাকে আজকের এই দিনের কথাগুলো আবার লোহাগাড়ায় এনে আবার ইনশাল্লাহ জবাবদিহি করতে হবে বাংলাদেশের জনগণের কাছে, লোহাগাড়ার জনগণের কাছে। ওইদিন বেশি দূরে না।’

তিনি ভিডিওতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘মনে রাখবেন বিপ্লব কুমার সরকার একজন ইন্ডিয়ার ‘র’ এজেন্ট। সে ইন্ডিয়া পালাই যাইতে পারবে, কিন্তু আপনারা ওসিরা কোথায় যাবেন?’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন দু’ভাগে বিভক্ত—এক ভাগে আপনারা আওয়ামী লীগ, কুত্তালীগের সাথে আছেন, অন্যভাগে জনগণ। জনগণের সাথে আজ পর্যন্ত কোনো স্বৈরশাসক পারেনি, পারবেও না ইনশাল্লাহ।’

ওসি রাশেদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে রিংকু বলেন, ‘আপনি ওসি রাশেদ সাহেব, আপনি যেভাবে আজকের দিন পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করছেন, গত জীবনে এতগুলো ওসি এসেছে কখনও এভাবে হয়রানি করেনি। আপনি কার কোটায় আসছেন, আ জ ম নাছির উদ্দিন আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। আপনার প্রত্যেকটা আরএস-বিএস আমাদের হাতে কালেকশনে আছে। এগুলোর জবাব আপনি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, আপনাকে লোহাগাড়ায় এনে বিচারের মুখোমুখি করবো। বিরোধীদলকে যেভাবে দমন পীড়ন করতেছেন, এগুলো আপনার মনে রাখতে হবে। আপনার ডায়েরিতে লিখে রাখবেন, আমাদের ডায়েরিতে লেখা আছে। আপনার বিচার লোহাগাড়ার মাটিতেই করবো, ইনশাল্লাহ্ আমি যদি এমপিপুত্র হয়ে থাকি। সাবধান হয়ে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটা দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য যে কাজগুলো করে যাচ্ছেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন, পারবেন না, পারবেন না আর। আপনাদের বিচারের কাটগড়ায় দাড় করানো হবে। এগুলোর বিচার আমরা একদিন করবোই। এবং অতি সন্নিকটেই করবো।’

ওসি রাশেদকে উদ্দেশ্য করে রিংকু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে না। আপনাকে নদভী, আপনাকে এই কসাই বাবুল বাঁচাতে পারবে না। ওসি রাশেদ সাহেব, সাবধান হয়ে যান, আবার বলছি সাবধান হয়ে যান। এই ভিডিওটি করছি আপনার জন্য। আপনি অনেক নিপীড়ন-নির্যাতন করছেন তাই আমি ভিডিও করছি, না হয় করতাম না। আমার ভাইরাল হওয়ার দরকার নেই। আমি এমনিতেই ভাইরাল, আমি এমপি মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরীর ছেলে।’

এদিকে রিংকুর এই ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর লোহাগাড়া থানার ওসি রাশেদুল ইসলাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ বিষয়ে ওসি রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ভিডিওটি আমার নজরে এসেছে। আমি আমার ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি এবং থানায় একটি জিডি করেছি।’

রিংকুর অভিযোগের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ওসি রাশেদ বলেন, ‘উনি অভিযোগ করতেই পারেন, বলতেই পারেন, সেটা উনার অধিকার। তবে এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আইনের বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই। যা হবে আইন মেনেই হবে।’

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!