রোজায় দোকান না খুলতে কাউন্সিলরের ‘মাতব্বরি’, সমালোচনার ঝড় ফেসবুকে

রমজান মাসে পর্দা দিয়ে দোকান খোলা রাখলে ‘কঠিন পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে ফের আলোচনায় এসেছেন চট্টগ্রামের লালখানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল। কাউন্সিলরের এমন ‘মাতব্বরি’র সমালোচনা করে ফেসবুকে সমালোচনা ঝড় ওঠেছে।

রোববার (১০ মার্চ) দুপুর ১২টায় নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া এক পোস্টে নগরীর লালখানবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল লিখেন, ‘সম্মানিত এলাকাবাসী, আসসালামুয়ালাইকুম। পবিত্র রমজানুল মোবারক। রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় ১৪ নং লালখান বাজার ওয়ার্ডে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সকল প্রকার খাবার হোটেল, চায়ের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা গেল। এছাড়াও কোন দোকানে পর্দা দিয়ে খাবার গ্রহণের ব্যবস্থা করা যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা সহ কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ভাবগাম্ভীর পরিবেশে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা‌ করছি।’

কাউন্সিলর বেলালের এই পোস্টের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই সমালোচনামুখর হয়ে ওঠেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিভিন্ন ধর্মের অনেকে।

আকতার হোসাইন মন্তব্য করেছেন, ‘ভিন্ন ধর্মাবলম্বী যারা, কর্মজীবী মানুষ যারা, পেটের দায়ে রোজা রাখতে পারে না, তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা থাকা কি উচিত নয়? যিনি আল্লাহর ভয়ে রোজা রাখেন, তার সামনে শতজন খাবার খেলেও তিনি রোজা ভাঙবেন না। বাস বা ট্রেন থেকে নেমে কোন দূরপাল্লার সফরকারী, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কি খাবে, কোথায় খাবে, যদি সব বন্ধ থাকে। এমনকি সফরকালে মুসলমানদের জন্যও রোজার বিধান শিথিল করা হয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আপনাকে সবার কথা মাথায় রাখতে হবে। রাষ্ট্র কি এরকম কোন আইন করেছে?’

মিলু এইচ রহমান মন্তব্য করেছেন, ‘এই ধরনের নির্দেশনা আওয়ামীলীগের কারও কাছ থেকে কাম্য নয়, এমনটি পাকিস্তানে হলে বলার কিছু ছিলো না, আফগানিস্তানে হলেও বলার কিছু ছিলো না, তবে আওয়ামীলীগ সরকারের বাংলাদেশে আশা করি না। যার ইচ্ছে সে রোজা রাখবে যার ইচ্ছে সে রাখবেনা, এখানে ধর্মের বিষয়ে বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে যা ইসলামের পরিপন্থী।’

কাউন্সিলর বেলালের পোস্টে দাস কিশোর নামে একজন লিখেছেন, ‘সত্যি কথা বলতে চট্টগ্রামের সবচাইতে বেশি অবৈধ কাজ হয়ে থাকে আপনার এলাকায়। তাছাড়া আপনি চাইলে আরো সুন্দর ডিসিশন নিতে পারতেন। খাবারের দোকানগুলোতে পর্দা দিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে পারতেন।এইসব কাজ না করে যতসব ফালতু কথাগুলো বলেন। এই কাজ দ্বারা প্রমাণিত হয় আপনি নামে আওয়ামী লীগ, ভিতরে ভিতরে জামায়াতের লোক।’

মেহজাবিন শহীদী নামের এক নারী লেখেন, ‘অনেক মুসলিমের জন্যেও রোজা না করা বৈধ আছে, আপনার জন্য কি তাদেরও না খেয়ে থাকতে হবে? আপনি কি জানেন যার জন্য রোজা মাফ করা হয়েছে তারা তবুও না খেয়ে থাকলে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার জন্য গুণাহগার হয়। আপনারা যে রোজা না করা মানুষদের পাবলিকলি শেম করে বাধ্য করছেন খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে। এতে আল্লাহ তাদের জন্য যা হালাল করেছে তা আপনারা ভাবগাম্ভীর্যের দোহাই দিয়ে কঠিন করছেন। গুণাহগার আপনারাও হবেন। এবং ধর্মের নাম নিয়ে জুলুমের শাস্তিও পাবেন।’

এদিকে সমালোচনার মুখে বুধবার (১৩ মার্চ) ওই কাউন্সিলর ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া আরেক পোস্টে লিখেন, ‘রোজার পবিত্রতা রক্ষায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের দোকান খোলার অনুমতি নাই তবে হালুয়া রুটির ভাগ খাওয়ার পর্দাশীল হোটেল রোজার পবিত্রতা মেনেই নিরাপদে চলছে। আমার একটি স্ট্যাটাস নিয়ে অনেকে নানা মন্তব্য করে আমাকে ধর্মান্ধ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে বলি এই হলুয়া রুটির দায় নিতে চাইনি বলেই হোটেল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছি। আমারো ভাবনায় অসুস্থ রোগী, পরিশ্রমী মানুষ, অন্য ধর্মের বিশ্বাসী লোক যারা রোজার আওতায় পরে না তারা ছিলেন আছেন ভবিষ্যতেও থাকবেন। কিন্তু যাদের ভাবনায় তারা থাকার কথা তারা কেন এদের কথা ভেবে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হোটেল খোলার নির্দেশনা দেয় না সে প্রশ্ন‌ আমার। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি শুধু এই পর্দাশীল হোটেলের হালুয়া রুটির ভাগ থেকে দায় মুক্ত থাকতে চেয়েছি মাত্র এর বেশি কিছু নয়।’

এর আগেও দলীয় নেতাকর্মীদের হামলা, কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয়, টিসিবির কার্ড বিতরণের স্বজনপ্রীতির অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়েছেন লালখানবাজারের কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মো. বেলাল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!