রাতের চট্টগ্রামে রাস্তায় অচেনা নারী প্রসবযন্ত্রণায়, নার্স এনে প্রসব করাল পুলিশ

মায়ের উঠছে খিচুনি, নবজাতক এনআইসিইউতে

সোমবার (২৩ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টা। চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান মোড়ের অন্ধকার গলির এক জায়গা থেকে নারীকণ্ঠে ভেসে আসছিল গোঙানির শব্দ। অনেকেই পাশ কাটিয়ে গেছেন, কৌতূহলে আবার পথচারীদের কেউ কেউ উঁকি মেরেও দেখছিলেন। দু একজন খেয়াল করে দেখলেন, ওই নারী মূলত প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছেন। সেই কাতরানি বাড়ছে মিনিটে মিনিটে। এমন দৃশ্য দেখে প্রান্ত নামের এক পথচারী জাতীয় জরুরি সহায়তা সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনাটি জানান।

রাতের চট্টগ্রামে রাস্তায় অচেনা নারী প্রসবযন্ত্রণায়, নার্স এনে প্রসব করাল পুলিশ 1

ঢাকা ঘুরে সেই খবর চলে আসে জামালখান এলাকায় থাকা কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টহল টিমের কাছে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় ওই টিম। উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তফা খেয়াল করে দেখেন, ওই নারী বাচ্চা প্রসবের শেষ মুহূর্তে অতিক্রম করছেন। রক্তপাত হচ্ছিল তার শরীর থেকে।

কাকতালীয়ভাবে পাশেই ছিল ‘ইনোভা’ নামের একটি বেসরকারি হাসপাতাল। এসআই মোস্তফাসহ তার পাঁচ সদস্যের টিম দৌড়ে যান সেই হাসপাতালে। বুঝিয়ে বলতেই জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামসহ নার্সরা দ্রুত পৌঁছে যান ‘বীর চট্টলা’ রেস্টুরেন্টের পাশের গলির সেই জায়গায়।

নার্সদের চেষ্টা, পথচারীদের উৎকণ্ঠা মাড়িয়ে এর মিনিটদশেকের মাথায় জামালখান মোড়ে রাস্তার ওপরে ওই নারীর গর্ভ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে ফুটফুটে এক নবজাতক— ছেলেসন্তান!

কিন্তু মায়ের অবস্থা তখন খুবই খারাপ। ‘ইনোভা’ নামের সেই বেসরকারি হাসপাতালে সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেয়। এরপর সেই অ্যাম্বুলেন্সে মা ও নবজাতককে নিয়ে এসআই মোস্তফা ও তার টহল টিম ছুটলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। ততোক্ষণে যে যার মতো করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে হাজির জামালখান থেকে যাওয়া আরও কয়েকজন তরুণ।

চট্টগ্রাম মেডিকেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা দেখেই জানালেন, মা ও নবজাতককে রাখতে হবে নিবিড় পর্যবেক্ষণে। তার আগে লাগবে রক্ত। কোতোয়ালী থানা পুলিশের সেই টহল দলের সদস্যরা রক্ত দিতেও পিছ পা নয়। কিন্তু দেখা গেল, তাদের কারোরই গ্রুপ ‘ও-পজিটিভ’ নয়। অবস্থা আঁচ করে পুলিশের সঙ্গে মেডিকেলে যাওয়া জামালখানের দুই তরুণই বসে গেলেন রক্ত দিতে। দুই ব্যাগ রক্ত সেখান থেকে জোগাড় হলেও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দরকার হতে পারে আরও রক্ত।

ওষুধের প্রয়োজনও পড়ছে একটু পর পর। সেসব জোগাড় করতে পুলিশের পাশাপাশি মধ্যরাতে দৌড়াচ্ছেন জামালখান থেকে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবী দুই তরুণ তাহিম ও রাজ।

ফুটপাতে বাচ্চা প্রসব করা ওই নারী মানসিক ভারসাম্যহীন— এমন কথা জানিয়ে রাত দেড়টায় চট্টগ্রাম মেডিকেলে নবজাতক থাকা কোতোয়ালী থানার এসআই মোস্তফা কামাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওই মহিলার ইতিমধ্যে দুই দফা খিচুনি উঠেছে। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে একটি সিটে বিশেষভাবে রাখা হয়েছে।’

তিনি জানান, ‘ডাক্তাররা বলেছেন, নবজাতক বাচ্চাটার ওজন বেশ কম। এজন্য তাকে এনআইসিইউতে (নবজাতক নিবিড় যত্ন ইউনিট) নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!