মোহরায় কিশোরী খুন/ সন্দেহের তীর সৎ পিতার দিকে

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার মোহরায় দিনদুপুরে ছুরিকাঘাতে নিহত কিশোরী পরিচয় মিলেছে। তবে প্রকাশ্যে এ ধরনের নৃশংস খুনের শিকার কেন হল ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরী—সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে তদন্তে নিয়োজিত চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ। তবে প্রাথমিকভাবে এ খুনের জন্য সন্দেহের তীর নিহত সোমা ওরফে রেহার (১৬) সৎ পিতা নবীর দিকে।

এর আগে শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে পাঁচটার দিকে মোহরার খেজুরতলার রেললাইনের ওপর খুন হন রেহা। এখানে সিঁড়ির গোড়া নামে একটি রাস্তা পারাপারের সিঁড়ি আছে, যা দিয়ে লোকজন রেললাইন পারাপার করে থাকেন।

নিহত রেহা সাতকানিয়ার বাসিন্দা নবীর সৎ মেয়ে। তিনি নবীর ধর্মান্তরিত স্ত্রী আরতি ওরফে নাসিমার মেয়ে। রেহা তার সৎ পিতা নবী ও মা নাসিমার সঙ্গে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে থাকতেন।

পুলিশ জানিয়েছে, রেহার বয়স যখন দুই বছর, তখন নিজ স্বামীকে ত্যাগ করে নবীকে বিয়ে করেন মা আরতি। তখন মা মেয়ে দুজনই ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করেন। তখন নাম পাল্টে আরতি নিজের নাম রাখেন নাসিমা আর মেয়ে সোমার নাম রাখেন রেহা। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) আরতির বোন পোশাককর্মী পূর্ণিমার (সম্পর্কে রেহার খালা) মোহরা খেজুরতলার বাসায় বেড়াতে আসে রেহা। কিন্তু এ ঘটনায় রাগ করেন রেহার সৎ পিতা নবী। পূর্ণিমাকে ফোন করে দ্রুত তার মেয়ে রেহাকে পাঠিয়ে দিতে বলেন। কথামত শুক্রবার (৫ জুলাই) রেহাকে সাতকানিয়ার বাসায় পাঠিয়ে দেন খালা পূর্ণিমা। রেহা সাতকানিয়ায় পৌঁছে মোবাইলে খালা পূর্ণিমাকে বিষয়টি নিশ্চিতও করে। কিন্তু শনিবার বিকেলে যখন খবর পান খেজুরতলার রেললাইনের পাশে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীর মরদেহ পড়ে আছে, সেই খবর পেয়ে উৎসুক জনতার মত এসে খালা পূর্ণিমা দেখতে পান, তারই বোনের মেয়ে রেহার রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে রেললাইনের পাশে।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান, বিকেলে খেজুরতলার রেললাইনে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীকে কে বা কারা ছুরিকাঘাত করেন। তার বাম চোখের পাশে মাথায় ছুরিকাঘাত করায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। এমনকি ছুরিটিও কয়েক ইঞ্চি মাথায় গেঁথে আছে। ফলে স্পটেই মারা যায় ওই কিশোরী।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শী মিলছে না। এজন্য কিশোরীর পরিচয়ও জানতে পারছি না। আবার খুনি কে বা কারা সেটাও নিশ্চিত হতে পারছি না। ডিসি স্যার সহ ঘটনাস্থলে আমরা অবস্থান করছি, হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছি।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিহত কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন খুনের মোটিভ ও হত্যাকারীর পরিচয় উদঘাটন করার চেষ্টা চলছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করছি, পারিবারিক কলহের জেরে রেহার সৎ পিতা নবীই এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। হয়তো তিনি স্ত্রী আরতি ওরফে নাসিমার পরিবারের সাথে তার মেয়ের যোগাযোগ করাটা মেনে নিতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে গেছে। তাই আমরা ধারণা করছি, নবীই এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে। তবে সেটি নিশ্চিত নয়।’

এডি/

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!