ভোটের দুদিন পরও উত্তেজনা-গোলাগুলি সাতকানিয়ায়, শিশু নিহতের ঘটনায় মামলা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দুদিন পরেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। হামলা পাল্টা হামলা, গোলাগুলির ঘটনায় এলাকার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।

নির্বাচনের দিন দায়ের কোপে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সাতকানিয়া উপজেলার ৩ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে বিজয়ী ও পরাজিত দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয় পক্ষে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। একজনকে গুরুতর অবস্থায় চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার পশ্চিম পাশে সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য ফরহাদ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া নির্বাচিত ইউপি সদস্যের বাড়িতে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলেন- নুর হোসেন (৩২), মো. ইব্রাহীম (৪০), কামরুল ইসলাম (৪০), ইমরানুল হক নয়ন (২০), আব্বাস উদ্দিন (৩২) ও মো. ইউছুপ (৪০)। এছাড়া মারধরে আহত হয়েছেন, সেলিম উদ্দিন (৪০) ও আবু ছালেক (৫০)। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত নুর হোসেনকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চেয়ারম্যান রমজান আলী বলেন, ভায়রা ভাইয়ের বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার পথে ফরহাদের লোকজন আমার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। তবে বিজয়ী মেম্বার ফরহাদের ভাই মো. রিফাত বলছেন, চেয়ারম্যান রমজান আলী ও তার ভায়রা ভাই আবু তৈয়বের নেতৃত্বে তার বসত ঘরে গুলি ও হামলা চালিয়ে ভাংচুর করা হয়।

এদিকে নির্বাচনের দিন উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের বাইরে দুর্বৃত্তের দায়ের কোপে শিশু তাসিফ নিহততের ঘটনায় বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকালে সাতকানিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত শিশুর বাবা জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাজালিয়ায় ভোট কেন্দ্রে আব্দুল শুক্কুর নিহতের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার ওসি আবদুল জলিল।

বুধবার সংঘর্ষের ঘটনাস্থল সাতকানিয়ার নলুয়া, খাগরিয়া ও বাজালিয়া পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ক্রাইম) জাকির হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আফরুজুল হক টুটুলসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রমজান আলীর ভায়রা ভাই আবু তৈয়ব সদস্য পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করে পরাজিত হন। চেয়ারম্যান রমজান তার ভায়রা ভাইকে সান্ত্বনা দিতে ঘটনার দিন রাতে মোজাফফর চেয়ারম্যানের বাড়ি এলাকায় তৈয়বের বাড়ি যান।

ফেরত আসার পথে আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসার পশ্চিমে সড়কে পৌঁছলে তৈয়বের সমর্থক আবিদকে ফরহাদের লোকজন মারধর করে। পরে রমজান আলীর লোকজন ফরহাদের বসত ঘরে গিয়ে ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। পাশাপাশি ভাংচুর করা হয় রান্না ঘর ও উঠানে থাকা মোটর সাইকেল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে রমজান আলীর লোকজন পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় চেয়ারম্যান রমজান আলী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ফরহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান রমজান আলী জানান, আমি গাড়ি নিয়ে কাঞ্চনা আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসা এলাকায় পৌঁছার সাথে সাথে নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য ফরহাদ ও তার ভাই দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার হত্যাসহ ২২টি মামলার আসামি মো. রিফাত ও সমর্থকরা মিলে আমার গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে।

তখন আমার ড্রাইভার গাড়ি থামালে আমি দৌঁড়ে পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে গিয়ে আশ্রয় নিই। এসময় তারা আমাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে আমার ভায়রা ভাইয়ের বাড়িতে গুলি বর্ষণ ও ভাংচুর চালায় এবং আবু তৈয়বকে মারধর করে। এ ঘটনায় আব্বাস উদ্দিন ও কামরুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

তবে রমজান আলীর বক্তব্য অস্বীকার করে মো. রিফাত বলেন, আমার ভাই বিজয়ী হওয়ার পর আমরা এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করছিলাম। এসময় পরাজিত মেম্বার প্রার্থী আবু তৈয়বের নেতৃত্বে আমাদের কয়েকজন সমর্থককে মারধর করে। পরে চেয়ারম্যান রমজান ও তৈয়বের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা আমাদের বসত ঘরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ, বসত ঘর ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। তিনি আরও বলেন, লম্বা বন্দুক নিয়ে তৈয়ব সরাসরি গুলিবর্ষণ করে, যা সিসিটিভি ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল জানান, কাঞ্চনায় গুলিবর্ষণের ঘটনায় চেয়ারম্যান রমজান আলী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য মো. ফরহাদ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনার প্রকৃত রহস্য খোঁজার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!