এনআইডি জালিয়াতি/ জয়নালের জবানিতে ১৫ জনের নাম

জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির চক্রে নির্বাচন কমিশন ডবলমুরিং থানার অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনই একা নন। রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম উঠানোসহ জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে সম্পৃক্ত আছে নির্বাচন কমিশনের একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫ জন। এদের মধ্যে পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করলেও নজরদারিতে রয়েছে আরও ১১ জন।

তাদের বিষয়েও অনুসন্ধান করছে মামলার তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিট। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জয়নালের জবানবন্দিতে এসব নাম উঠে আসে।

এর আগে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া। তবে সাত দিন নয়, তিন দিনের মাথায় নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নির্বাচন কমিশনের কর্মী জয়নাল আবেদীন। এমনকি তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) মোস্তফা ফারুক (৩৬) নামে ইসির এক অস্থায়ী কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল সিটি ইউনিট। তাকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিটি ইউনিট।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘শনিবার বিকেলে তিনটার দিকে ইসি কর্মী জয়নালকে আদালতে আনা হয়। এ সময় বিচারক তাকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন কিনা—তা ঠিক করার জন্য ৬টা পর্যন্ত সময় দিলেও তার আগেই তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হন। পরে বিচারকের খাসকামরায় জবানবন্দি দেওয়া শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। পরে সন্ধ্যা ৭টার পর তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে জয়নাল এনআইডি জালিয়াতির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন অফিসের বেশ কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এই চক্রের অনেকের নাম প্রকাশ করেছেন। অন্তত ১৫ জনের নামের এই তালিকায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের নির্বাচন কার্যালয়ের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা, স্থায়ী ও আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কয়েকজন কর্মচারী ও সাবেক কর্মরত ককেয়কজন কর্মীর নামও আছে। ইতোমধ্যে ১৫ জনের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাদের সবাই থানা পর্যায়ের কর্মকর্তার নিচের র‌্যাংকের কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। বাকি ১১ জনের মধ্যে বেশ কয়েকজন কাউন্টার টেরোরিজমের নজরদারিতে রয়েছে।

এর আগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল জানিয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশন চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন ২ দিনের জন্য কোতোয়ালী থানার দেওয়ানবাজার সাব-এরিয়া এলাকার আমেনা মঞ্জিলের ষষ্ঠ তলার একটি ফ্ল্যাটেই রীতিমতো অফিসকে নিয়ে আসতেন। সেই ফ্ল্যাটে নির্বাচন কমিশনের অফিস থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা, ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার, সিগনেচার প্যাডও আনতেন। সপ্তাহের সরকারি বন্ধের ২ দিন শুক্রবার ও শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে নিজ ফ্ল্যাটে বসে জাতীয় পরিচয়পত্রের যাবতীয় প্রাথমিক কার্যক্রম (ডাটা ক্রিয়েট) সম্পন্ন করতেন।

জয়নাল এই দায়িত্ব পালন শেষে সব তথ্য ঢাকার নির্বাচন কমিশন অফিসের এনআইডি শাখায় কর্মরত সাগরের কাছে মেইলে পাঠিয়ে দিতেন। তারপর অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ব্যবহৃত ল্যাপটপ সংগ্রহ করে নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে তথ্য আপলোডসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতেন সাগর। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রিন্ট কপি এসএ পরিবহনের (কুরিয়ার) মাধ্যমে চট্টগ্রামে জয়নালের কাছে পাঠাতেন সাগর।

আর গ্রাহক সংগ্রহ ও পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করতেন সত্য সুন্দর দে, বিজয় দাশ ও সীমা দাশ। তারা চট্টগ্রাম, ঢাকা, কক্সবাজারের বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রত্যেকটি এনআইডি কার্ডের জন্য ৫০-৬০ হাজার টাকা আদায় করতেন।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!