বেড়িবাঁধ রিং রোড নির্মাণ, বিদ্যুৎ নেই, নিরাপত্তাহীন হাজারো গার্মেন্টস কর্মী

 

আমিনুল হক শাহীন :::

দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সিডিএ আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্প। নগরীর পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা স্টেডিয়াম পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ কিলোমিটার চার লেইন বিশিষ্ট সিডিএ আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। আগামী ২০১৭ সালের জুন মাসে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানা যায়।

 

ইতোমধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বন্দর পতেঙ্গায় বেড়িবাঁধে বসবাসরত হাজার হাজার পরিবার ঘর-বাড়ি, দোকান পাট উচ্ছেদ করা হলেও পুরো এলাকা রয়েছে এখনো বিদ্যুৎ বিহীন। যেখানে দিনের বেলায় ধু-ধু মরুভূমি আর সন্ধ্যার পর যেন সৃষ্টি হয় ভূতুড়ে পরিবেশ। অতচ বিদ্যুৎ বিহীন খোলা এ বেড়িবাঁধ দিয়ে সকাল সন্ধ্যা অনুমানিক প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার সিইপিজেড এবং কেইপিজেডের গার্মেন্টস কর্মীরা আসা যাওয়া করে। সন্ধ্যার পর এ বেড়িবাঁধ ঘুটঘুটে অন্ধকারে ১০০ গজের ভিতর কেউ আছে কিনা দেখা যায় না। ঐ সময় কোন গার্মেন্টস শ্রমিক বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করার মত লোকজনও পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

 

 

এমন অবস্থায় দেশের বৃহত্তর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগনেরCDA Outer Ring Road News & Photo- 10.05.2016 copy সুযোগ সুবিধার বিষয়টি খেয়াল রাখা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বলে মনে করেন এলাকাবাসী ।

 

 
মুন্নি আক্তার নামের এক গার্মেন্টস কর্মী জানান, প্রতিদিন বিকাল ৫ টার পর থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত এ পথে যাতায়াত করে হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক।  বেড়িবাঁধে সন্ধ্যার পর বিদ্যুতের কোন ব্যবস্থা না থাকার কারণে কর্মরত হাজার হাজার মহিলা গার্মেন্টস শ্রমিক এবং সাধারণ জনগন নিরাপত্তাহীনতাই ভূগছে । অন্ধকার মানবশূন্য সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অপরাধীর দলগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে।

 

মহিলা শ্রমিকদের অফিস শেষে এ পথ দিয়ে বাসায় ফিরতে হয় অনেক আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকার কারণে বেড়িবাঁধ এলাকায় অপরাধ প্রবণতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। সাম্প্রতিক বেড়িবাঁধের এক অজ্ঞাত মহিলা গার্মেন্টস শ্রমিকের স্বামীকে গাছের সাথে বেঁধে তাকে আম বাগানো নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। তিনি বলেন এ বিষয়ে কোন মামলা না হওয়ার কারণে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। তাই আমরাও নিরাপদ নই। মহিলা গার্মেন্টস কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য অফিস ছুটির সময় তাদের পরিবারের সদস্যরা বেড়িবাঁধে কিংবা অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

 
বাংলাদেশ শ্রমিক সংগঠন সি ইপিজেড শাখা (ডব্লিউ ডব্লিউ এ) এর চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম খান বলেন, আমি চট্টগ্রামে ২০০০ সালের পর থেকে শ্রমিকরা যেন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে তাদের প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলনে আমি সমর্থন দিয়ে আসছি। কিন্তুু শ্রমিকরা যদি দাবি আদায় করতে গিয়ে গার্মেন্টস শিল্প ভাংচুর এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষতি সাধন করে থাকে আমি তার পক্ষে নই।

 

সিডিএ আউটার রিং রোড নির্মাণ দেশের উন্নয়নের একটি বৃহত্তর স্বার্থ। বেড়িবাঁধে উচ্ছেদকৃতদের হাজার হাজার পরিবারগুলোর নিরাপত্তা এবং সাময়িক বিদ্যুতের ব্যবস্থা খুবই জরুরী। শ্রমিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বেপজা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে রিং রোড নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পযন্ত অস্থায়ী বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল পুলিশ ফাঁড়ি এবং প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এলাকাবাসীর ও গার্মেন্টস কর্মীরা আরো সচেতন হলে শুক্রবার ও জাতীয় দিবসে বন্ধের দিনে যারা আত্মীয় স্বজন নিয়ে সমুদ্রের তীরে বেড়াতে যায় সূর্য ডোবার আগেই নিজ দায়িত্বে বাসায় ফিরে গেলে অনেক অনাকাঙ্কিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব।

 
পতেঙ্গা বেড়িবাঁধ ভুমিহীন সমবায় সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কাংক্ষিত লক্ষ্যে। সিডিএ আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্প তারই একটি দৃষ্টান্ত। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হবে পাশাপাশি দীর্ঘ যানযটের কবল থেকে মুক্তি পাবে চট্টগ্রামবাসী । তবে দেশের বৃহত্তর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাধারণ জনগনের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি খেয়াল রাখা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। বিদ্যুৎবিহীন খোলা বেড়িবাঁধে এবং ভুমিহীন সৈকত পল্লীতে বসবাসকারী ৫০০ পরিবারের বিদ্যুতের ব্যবস্থা খুবই জরুরী। কেননা এই ৫০০ পরিবারের অনেকেই গার্মেন্টস কর্মী। পুলিশ ও র‌্যাব প্রশাসনের কঠোর নজরদারি এবং টহল বেড়িবাঁধে অব্যাহত থাকলে গার্মেন্টস শ্রমিক এবং এলাকাবাসীরা নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারবে।

 
৩৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি খোজ নিয়ে জানতে পারি উচ্ছেদকৃতদের কয়েক হাজার নিম্ন আয়ের পরিবার জীবন জীবিকার তাগিদে ঘর ভাড়া থেকে বাঁচতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পতেঙ্গা খেজুর তলা বেড়িবাধ ও আকমল আলী রোড এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী খালপাড়ে বসবাস করছে। আপনারা জানেন ইপিজেড এলাকা ঘনবসতি ও শিল্প এলাকা এখানে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। এলাকাবাসীর নাগরিক সুযোগ সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে আমার নৈতিক দায়িত্ব। আমি ব্যক্তিগতভাবে গার্মেন্টস শ্রমিকের নিরাপত্তার স্বার্থে খুন, ধর্ষণ, চুরির মত বড় দূর্ঘটনা এড়াতে আমি নিজ প্রয়োজনে সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ ও র‌্যাব প্রশাসনের সহযোগিতা চাইবো।

 
চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (বেপজা)’র জি.এম খুরশিদ আলম মুঠোফোনে বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা সকাল সন্ধ্যা অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের উন্নয়নে অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা এবং ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ব আমাদের। বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। কেউ কোন অভিযোগ করেনি। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই বিষয়টি আমাকে অবগত করার জন্য। খুব শীঘ্রই আমি বেড়িবাঁধ এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করবো। শ্রমিকদের সাথে কথা বলব। আমার একটা শ্রমিক যেন নিরাপত্তাহীনতাই না ভোগে সে জন্য আমি এলাকার কাউন্সিলরদের এবং প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবো। শ্রমিকরা যেন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে তাই বিদ্যুতের ব্যবস্থার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দ্রুত আলোচনা করব।

 

রিপোর্ট : আমিনুল হক শাহীন

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

 

 

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!