তিন বছর পর কপাল খুলছে বহদ্দারহাট-কালুরঘাট সড়কের

অবশেষে সড়কের নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের আরকান সড়কের বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট অংশে চলাচলকারী যাত্রীরা। পাশাপাশি সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থরাও হচ্ছেন দুশ্চিন্তামুক্ত। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর আরকান সড়কের সংস্কার করতে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। টেন্ডারসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এখন শুধু অপেক্ষায় মেয়রের উদ্বোধনের। বৃষ্টি থামলেই চলতি সপ্তাহের যে কোনও দিন উদ্বোধন করা হবে বহুল আলোচিত এ সড়কের সংস্কারকাজ।

চট্টগ্রাম ওয়াসার শেখ রাসেল (মদুনাঘাট) প্রকল্পের পাইপলাইন বসানোর জন্য ২০১৬ সালের শুরুতে আরাকান সড়কের নগর অংশের ৬ দশমিক ৩ কিলোমিটারের মধ্যে বহদ্দারহাট মোড় থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার সড়কের একপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে ওয়াসা। এরপর দীর্ঘ তিন বছর ধরে ব্যস্ত সড়কে পাইপলাইন বসানোর কাজ চলে। তখন থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের একপাশ বন্ধ। আরেক পাশ দিয়ে চলছে গাড়ি। ওই অংশও অনেক স্থানে ভাঙাচোরা। আর এর মধ্যে ফ্লাইওভারের র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের অক্টোবরে বহদ্দারহাট মোড় থেকে টার্মিনালমুখী সড়কের একপাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার বহদ্দারহাটমুখী যানবাহন বাস টার্মিনাল হয়ে নতুন চান্দগাঁও থানার সামনে দিয়ে চলাচল করে আসছে।

এরকম যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনেও নেমেছিলেন এলাকাবাসী। এছাড়া এনিয়ে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা সময়ে লেখালেখি হয়েছিল। ওই সময়ে এ সড়কের মালিক সিটি করপোরেশন দাবি করছিল, ওয়াসা তাদের সড়কটি হস্তান্তর না করায় সিটি করপোরেশন সংস্কার কাজ শুরু করতে পারছে না। তবে এ বছরের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম ওয়াসা সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করে। এরপর থেকে সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন।

এ বছরের শুরুর দিকে সিটি করপোরেশনের পাঠানো আরকান সড়কের বহদ্দারহাট টু কালুরঘাট সড়ক সংস্কারের জন্য প্রায় ৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হয়। এরপর থেকে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নের পাশাপাশি ঠিকাদারদের কার্যাদেশ প্রদান করে সিটি করপোরেশন। প্রায় ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি ১২টি লটে ১২জন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের দুই ডিভিশনের অধীনে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

সিটি করপোরেশনের এ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহীনুল আলম বলেন, ‘সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বহদ্দারহাট টু কালুরঘাট সড়ক সংস্কারের জন্য আমরা প্রস্তুত। এখন মেয়র মহোদয় আমাদের সড়কটি সংস্কার কাজের উদ্বোধনের সময় দিবেন তখনই আমরা কাজ শুরু করব।’

কিভাবে এ কাজ করা হবে—এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সড়কটি বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নতুন করে সংস্কার হবে। প্রথমদিকে এখন যে পাশ বন্ধ রয়েছে সেটাই সংস্কার করবো। তারপর ওই পাশটি উন্মুক্ত করে বর্তমানে চালু পাশটি সংস্কার করবো। যাতে করে মানুষের যাতায়াতপথ উন্মুক্ত থাকে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১২ লটে এই কাজ শেষ করার আশা রাখছি।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটি সংস্কার নিয়ে নানা কথা উঠছে। ওয়াসা আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার পর একনেক থেকে প্রকল্পটি পাস করা, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নসহ সব কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন বৃষ্টির কারণে কাজ উদ্বোধন করতে পারছি না। বৃষ্টি কমলেই এ সপ্তাহের যে কোনো দিন সংস্কার কাজের উদ্বোধন করবো।’

নগরের ব্যস্ততম এই সড়কের দুই পাশে রয়েছে কালুরঘাট শিল্প এলাকা, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও বিনোদনকেন্দ্র স্বাধীনতা কমপ্লেক্স। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে নগরীর মোহরা ও চান্দগাঁও ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। এ ছাড়া উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার একাংশ, কাপ্তাই উপজেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর মানুষের নগরের সঙ্গে যোগাযোগ এই পথে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাত্রীবাহী বাস ও টেম্পো, পণ্যবাহী ট্রাক-মিনিট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে।

এ কারণে পুরাতন চান্দগাঁও থানার সরাফত উল্লাহ পেট্রোল পাম্প থেকে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল, চান্দগাঁও আবাসিকের প্রবেশ পথের সামনে, কালুরঘাট সিএন্ডবি, বাহার সিগনাল ও কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকছে। এছাড়া সড়কের একপাশের দুরবস্থার জন্য দোকানগুলোতে বেচাকেনা অর্ধেকের বেশি কমে গেছে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ীরা।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!