চট্টগ্রামের কাট্টলীতে মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছের পরিবারকে পাকা বাড়ি দিল চসিক

নগরীর উত্তর কাট্টলীতে প্রয়াত এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এ এলাকার মাওলানা তমিজুর রহমানে বাড়ির প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছের পরিবারের কাছে এ ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে সিটি কর্পোরেশন কনফারেন্স রুমে মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছের স্ত্রী খোরশেদা বেগমের কাছে ‘মুক্তি ভবন’ এর চাবি হন্তান্তর করেন সিটি মেয়র।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ২০১৭ সালে নগরের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসত ভিটায় পাকা বাড়ি তৈরি করার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। নগরীর ৫০ অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার গৃহ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ১৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান নগরীর অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে।

সেই ধারাবাহিকতায় ১০নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন, ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, ৩০ পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা নুর আহম্মদ এবং ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা কুতুব উদ্দিনের পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করে চসিক।

ইতোমধ্যে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াসের পাকা বাড়ি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাড়ে ৯শ বর্গফুট বিশিষ্ট এ ‘মুক্তি ভবন’ নির্মাণ করতে চসিকের ব্যয় হয়েছে ২৬ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। এটাই চট্টগ্রাম শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ‘মুক্তি ভবন’। এতে থাকছে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার ও খাবার ঘর, একটি রান্নাঘর ও দুটি শৌচাগার । অপরাপর মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামুদ্দোহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। তারা দেশ স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। তাদের কারণেই আজ আমরা স্বাধীনভাবে চলার ও বলার অধিকার লাভ করেছি। এদেশের মাটি জলে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছি। জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঋণ অবশ্যই শোধ করতে হবে এ জাতিকে। তাই অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ নির্মাণ করে জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন, ‘দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নগর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদেরও ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।’ অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

সিটি মেয়র থেকে ‘মুক্তি ভবন’ পেয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছের পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করেন। মরহুমের পুত্র হুমায়ন মোহাম্মদ বাবর আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, ‘চার বছর আগে আমার পিতা মারা যান। মুত্যুকালে তিনি ২ গন্ডার চেয়ে কম বসত ভিটে রেখে যান। এই ভিটার উপর একটি বেড়ার ঘর ছিল। সেখানে আমি, আমার মা ও বোন কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রস্তাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই মুক্তি ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। এজন্য মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নিকট আমাদের পরিবার কৃতজ্ঞ।’

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চসিক প্যানেল মেয়র ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, মো. জহুরুল আলম জসিম, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাাউন্সিলর আবিদা আজাদ, সচিব আবু সাহেদ চৌধুরীসহ মহানগর কর্মকর্তাদের মধ্যে ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল হক সৈয়দ, সহকারী কমান্ডার সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, খোরশেদ আলম (যুদ্ধাহত), এফ এফ আকবর খান, কোতোয়ালী থানা কমান্ডার সৌরিন্দ্রনাথ সেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী কাজী নুরুল আবছার, আকবরশাহ থানা কমান্ডার মো. সেলিমউল্লাহ, পাহাড়তলী থানা কমান্ডার হাজী জাফর আহমদ, খুলশী থানা কমান্ডার মো. ইউসুপ, বন্দর থানা কমান্ডার কামরুল আলম পতু, বাকলিয়া থানা কমান্ডার মো. আলী হোসেন, সদরঘাট থানা কমান্ডার মো. জাহাঙ্গীর আলম, কোতোয়ালী ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল আলম, আকবরশাহ ডেপুটি কমান্ডার মো. নূর উদ্দীন, হালিশহর ডেপুটি কমান্ডার মো. আবুল কাশেম, খুলশী ডেপুটি কমান্ডার মো. লিয়াকত হোসেন, পতেঙ্গা ডেপুটি কমান্ডার মো. আবুল কালাম, নৌ কমান্ডো এ এইচ জিলানী চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুল হায়দার, মো. আবদুচ ছবুর, খুরশিদ আলম, প্রণাল চৌধুরী, নুরু নবী, শম্ভু দাশ, সৈয়দ আহামদ, আবদু ছবুর, মো. আলাউদ্দীন, আবদুচ সালাম, আবদুচ সবুর।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!