বঙ্গোপসাগরে বেআইনি ফিশিং বোটের ছড়াছড়ি

লাইসেন্স নেই বেশিরভাগেরই, জটিলতায় নিতেও আগ্রহ কম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী চ্যানেলসহ বঙ্গোপসাগরে অসংখ্য ফিশিং বোট চলছে অনুমোদন ছাড়াই। এর সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে যোগ হয়েছে ইলিশ ধরার ফিশিং বোট। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অন্তত ৫ শতাধিক বোট চলছে অবাধে। এসব বোটের অধিকাংশেরই লাইসেন্স নেই। একদিকে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে লাইসেন্স তৈরিতে ইচ্ছুক নন বোট মালিকরা, অন্যদিকে অনুমোদনহীন বোটগুলোর কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে সমুদ্রে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি হিসাব অনুসারে দেশে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযানের সংখ্যা প্রায় ৬৭ হাজার। লাইসেন্স পাওয়া বোটের সংখ্যা মাত্র ৩২ হাজার। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৭ হাজার নিবন্ধিত বোট রয়েছে। সারা দেশে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বোট বা ট্রলারের সংখ্যা ৬ হাজার ১১৭টি। মৎস্য সামুদ্রিক অধিদপ্তর ও নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণে লাইসেন্স জটিলতার বিষয়টি সুরাহা হচ্ছে না। অন্যদিকে অনুমোদন ছাড়া বোটের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান নেই, জরিমানা নেই, লাইসেন্স যাচাইয়ের কড়াকড়ি নেই। এসব কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার ১১-১৮ নম্বর ঘাট ও ইপিজেড থানার থানার আকমল আলী বঙ্গোপসাগর ও হালিশর থানার সাগরপাড় এলাকার হাজারেরও অধিক ফিশিং বোট চলতি ইলিশ মৌসুমকে কেন্দ্র করে বর্তমানে সাগরে রয়েছে। সেখানে থাকা অধিকাংশ বোটেরই লাইসেন্স নেই বলে স্থানীয়রা জানান।

চলতি ইলিশের মৌসুমে পটুয়াখালী জেলা থেকে আসা বোটও সিবিচ ও আকমল আলী বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরছে। এ ধরনের বোটের সংখ্যাও পাঁচ শতাধিক। এখানে স্থানীয় বোট ও তাদের বোট মিলে লাইসেন্স ছাড়া বোটের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।

সামুদ্রিক মৎস্য অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (সংশোধিত ১৯৯৩) অধীনে প্রণীত বিধিমালার ১৮ ও ১৯ ধারা অনুযায়ী সমুদ্রে মাছ শিকারে স্থানীয় বোট বা ট্রলারকে নৌ বাণিজ্য দপ্তর থেকে সার্টিফিকেট অফ ইন্সপেকশন নিতে হবে। ওই সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে হবে সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরে। সেখানে মিলবে বোটের রেজিস্ট্রেশন নম্বর। এরপর বোটের লাইসেন্স পাবে মালিক।

এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বোট মালিকদের বেশ কয়েকজন বলেছেন, ‘বোটের লাইসেন্স করতে প্রথমে যেতে হয় নৌ-বাণিজ্য দপ্তরে। সেখান থেকে নিতে হয় ইন্সপেকশন সার্টিফিকেট। রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার পর লাইসেন্স পেতে আবার যেতে হয় সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরে। এসব হয়রানি ও জটিলতার কারণে কেউ সহজে বোটের নিবন্ধন করতে চায় না।’

শাহাজাহান নামে এক বোট মালিক বলেন, ‘সরকারি নিবন্ধন ফি কম হলেও জটিলতা বেশি। একটি বোটের রেজিস্ট্রেশন পেতে অনেক সময় লেগে যায়। একটি দপ্তরে কাজ সেরে আবার আরেকটি দপ্তরে কাজ করতে হয়। দুই দপ্তরে আলাদা করে কাগজপত্র জমা দেওয়া ও নানা দাপ্তরিক জটিলতায় বোট মালিকদের লাইসেন্স করার ইচ্ছে থাকে না।’

এ বিষয়ে নৌ বাণিজ্য দপ্তর চট্টগ্রামের প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেউ যদি নৌ-বাণিজ্য দপ্তরে বোট বা ট্রলারের রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার আবেদন করেন, তাহলে ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাই করে ওই ব্যক্তিকে বা বোটের মালিককে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এতে কোনো জটিলতা নেই। সারাদেশে মোট ৩২ হাজার বোটের রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে অবৈধ নৌ-যান।’

নিয়মিত নিবন্ধনহীন বোটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ট্রলার বা বোটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে কোস্টগার্ড, নেভি ও নৌ-পুলিশের সদস্যরা। এটা তাদের দায়িত্ব। আমাদের কাজ হলো শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশন দেওয়া।’

সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক (সামুদ্রিক) ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘নৌ বাণিজ্য দপ্তর থেকে শুরুতে ইন্সপেকশন অফ সার্টিফিকেট পাওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়। সেটি সম্পন্ন হলে বোট বা ট্রলার লাইসেন্স আবেদনকারীকে আরও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যান্ত্রিক নৌযানের লাইসেন্স দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৬ মাসে ৪-৫টি অভিযান পরিচালনা করাসহ অবৈধ কারেন্ট জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। পতেঙ্গায় একটি মাত্র চেকপোস্ট রয়েছে। সেখানকার কর্মকর্তারা নিবন্ধনহীন বোট বা ট্রলারের শনাক্তের কাজ করেন। সম্প্রতি বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ পাচ্ছি। এ কারণে শিগগিরই এ ব্যাপারে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেব।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!