সুফি মিজানের ইউআইটিএস নিয়ে গণ্ডগোল, ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী পিএইচপি পরিবারের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস) থেকে ‘ভুয়া বাড়ি ভাড়া চুক্তি’ করে ৫৭ কোটি টাকা চাওয়ার অভিযোগে এসার্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন চেয়ারম্যান শওকত হাসান মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত।

এর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর শওকত হাসান মিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএসের ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার ৮২৮ টাকা আত্মসাতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান সুফী মিজানুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন।

বুধবার (২৬ আগস্ট) বারিধারার বহুতল জামালপুর টাওয়ারের মালিক শওকত মিয়ার বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার পর প্রধান মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন এই আদেশ দেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএসের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, শওকত মিয়া ঢাকার সিএমএম আদালতে ইউআইটিএস ও পিএইচপি পরিবারের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

আইনজীবী দাবি করেছেন, শওকত মিয়া সুফি মিজানের স্বাক্ষর জাল করে কোন সাক্ষী ছাড়াই বাড়ি ভাড়া রেন্টাল চুক্তি করেন এবং ইউআইটিএস-এর কাছ থেকে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা দাবি করেন।

পরে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ইউআইটস ভুয়া নথিকে চ্যালেঞ্জ করে সিএমএম আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। উভয় মামলার প্রাথমিক শুনানির পর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন পিবিআইকে বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

১৪ জুন পিবিআই ইউআইটিএস-এর পক্ষে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে এই বলে যে শওকত মিয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। অন্যদিকে ইউআইটিএসের দায়ের করা মামলায়ও শওকত মিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।

বাড়ি ভাড়া চাওয়ায় চাঁদাবাজির মামলা, রক্ষা পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি
এর আগে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর এসার্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন চেয়ারম্যান শওকত হাসান মিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএসের ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ৫৭ কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার ৮২৮ টাকা আত্মসাতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএসের ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বারিধারার জামালপুর টুইন টাওয়ার-২ এর ১৮ তলাবিশিষ্ট ভবন ১০ বছরের চুক্তিতে ভাড়া নেন ব্যবসায়ী শওকত হাসান মিয়ার কাছ থেকে। পরবর্তীতে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা বকেয়া রেখে বাসাটি ছেড়ে চলে যায়। এই অর্থ আদায়ে যোগাযোগ করা হলে প্রাথমিক অবস্থায় ‘কিছুদিনের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে’ এমন জানিয়ে বারবার সময়ক্ষেপণ ও টালবাহানা করে ইউআইটিএস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ট্রাস্টিবোর্ডের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে উকিলের পরামর্শে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি আর ৪১১২/২০১৯ এবং সি আর ৪১১৩/২০১৯ নং মামলা দায়ের করেন জামালপুর টুইন টাওয়ার-২ এর মালিক শওকত হাসান। ডিসেম্বরের ৮ তারিখে গুলশান থানায় দায়ের করা এই মামলার পর ক্ষিপ্ত হয়ে শওকত হাসানের বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় পাল্টা চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। হয়রানিমূলক এই মামলায় শওকত হাসানের বাড়িতে তল্লাশিও চালায় পুলিশ।

শওকত হাসান ওই সময় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তার (সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান) কাছে আমি ৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা শুধু ভাড়া বাবদ পাই। এ ছাড়া গত ১০ বছর আমার ভবন ব্যবহার করে তারা যে ক্ষয়-ক্ষতি করেছে এবং নিজেদের মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় আমার ভবনেরও বেশ কিছু জিনিস খুলে নিয়ে গেছে, তার হিসেব এখনো আমি করতে পারিনি। এরই মধ্যে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। সেই মামলায় আমার বাসা তল্লাশির জন্য তছনছ করে দেয় পুলিশ। আদালতে আমি যেন যেতে না পারি, সে কারণে পাহারা দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপির কাছে লিখিত অভিযোগ করি আমি।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমার যাবতীয় কাগজপত্র দেখেছেন এবং আমার ওপর যেন আর হয়রানি না হয় সে বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন। এখন কোন হয়রানির শিকার না হলেও এই ব্যক্তি আমাকে টাকা ফেরত দেয়নি।’

শওকত হাসান বলেন, ‘সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাহেব অনেক বয়স্ক মানুষ। তিনি আমাকে ছেলে বলে ডাকতেন। তার সেই কথার ওপর বিশ্বাস করেই ভাড়া বকেয়া থাকলেও কখনও কিছু বলিনি। তার সঙ্গে শেষবার যখন আমার কথা হয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার এবং তার ছেলেদের বলেছিলেন আমার টাকা দিয়ে দিতে। ওয়েস্টিন হোটেলে হওয়া সেই মিটিংয়ের পর কিছুদিন তার ছেলে আমার ফোন ধরলেও পরবর্তীতে আর আমার ফোন রিসিভ করেনি। এখন পর্যন্ত এই ভাড়ার টাকা পাইনি আমি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!