ফুটপাতে চাঁদাবাজি করেন কাউন্সিলর রুমকি, ব্যবসায়ী নেতার মামলা

ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে মামলার আসামি হলেন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত।

সোমবার (২৪ অক্টোবর) টেরীবাজার, আন্দরকিল্লা হকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হাকিম এ মামলা দায়ের করেন প্রথম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দায়িত্ব দিয়েছেন।

মামলায় রুমকি সেনগুপ্ত বাদে অন্যান্য আসামিরা হলেন, অপু ধর রাজ (২৮), নগরের কোতোয়ালী থানাধীন রহমতগঞ্জ নিউ টাউন আবাসিক এলাকার আবুল ফজল সওদাগরের ছেলে মোহাম্মদ ইসমাইলসহ (৪০) অজ্ঞাত আরো পাঁচ থেকে ছয় জন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী বিশ্ব শীল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হাকিম বাদী হয়ে হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে রুমকি সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন।’

অভিযোগ উঠে, আন্দরকিল্লা দেওয়ান বাজার ও চকবাজার ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই হকারদের উপর জুলুম ও নির্যাতন শুরু করেন। হকারদের কাছে চাঁদার দাবিতে স্বয়ং তিনি নিজে গুন্ডা বাহিনী নিয়ে হাজির হন। হকারের প্রকারভেদে চাঁদা দাবি করেন। এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত দাবীকৃত চাঁদা তাকে দিতেই হবে। অন্যথায় চাঁদা ছাড়া ব্যবসা করা যাবে না বলে হুমকি দেন তিনি। অপারগতা স্বীকার করলে হকারদের মালপত্র রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হউ। গুণ্ডাবাহিনী দিয়ে মারধরের নজিরও রয়েছে।

একই ধারাবাহিকতায় গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যার দিকে নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের দ্বিতীয় গেইটের সামনে ফল বিক্রেতা হাসান আলীর সাত হাজার টাকার মালামাল নষ্ট করে কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্তসহ মামলার অন্যান্য আসামিরা। এ সময় তারা হাসান আলীর কাছ থেকে ২ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু হাসান আলী এ টাকা দিতে অস্বীকার করলে রুমকিসহ তার গুন্ডাবাহিনী মালপত্র রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেন। একইভাবে সাব-এরিয়া বাজারের হকারদের কাছ থেকে এক হাজার টাকা করে চাঁদা নেন এ চক্রটি।

নীরবে-নিভৃতে নিম্নআয়ের মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন রুমকি সেনগুপ্ত। এছাড়া দাবীকৃত চাঁদা না দিলে হকারদের ব্যবসা করতে দেবেন না বলে হুমকি দেন তিনি। তার এমন অন্যায়ের প্রতিবাদে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন টেরীবাজার, আন্দরকিল্লা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হাকিম। আদালতে উপস্থিত হয়ে দন্ডবিধির ৪২৭/৩৮৫/৫০৬(২) ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের পর গত ২০ অক্টোবর আন্দরকিল্লা টেরীবাজার এলাকায় আবারো হকাররা বসে পড়ে। এ বিষয়ে তাদেরকে ওয়ার্নিং দিতে গেলে টেরীবাজার, আন্দরকিল্লা হকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হাকিমসহ আরও অনেকে তেড়ে আমাকে মারতে আসেন। এ সময় আপেল বিক্রেতা হাসান আলীও তাদের সঙ্গে ছিল।’

তিনি বলেন, ‘তাদের হামলা থেকে বাঁচতে একটি মিষ্টির দোকানে গিয়ে বসে পরি। এরপর কোতোয়ালী থানা পুলিশকে জানালে তাদের একটি টহল টিম ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই লোকমান হাকিমের গুন্ডাবাহিনী পালিয়ে যায়। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। একই দিনে কোতোয়ালী থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ দিই। পরদিন শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করি। কিন্তু এ বিষয়ে থানা পুলিশ কেন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি? অভিযুক্ত ব্যক্তি জনসম্মুখে ঘুরলেও পুলিশ তাকে খুঁজে পায়নি।’

রুমকি আরও বলেন, ‘তাছাড়া আমি একজন জনপ্রতিনিধি। ফুটপাতে দোকান বসিয়ে জনগণের হাঁটা-চলায় বিঘ্ন ঘটলে বিষয়টি আমারে দেখতে হবে। এটি আমার দায়িত্ব। আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাকে এমন হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আন্দরকিল্লা মোড়, টেরীবাজার, জেনারেল হাসপাতালের সামনে যে পরিমাণ হকার বসে তাদের কারণে সারাক্ষণ এই রোডের যানজট লেগেই থাকে। বক্সিরবিট পুলিশ ফাঁড়ি থাকা সত্ত্বেও ফাঁড়ি ঘিরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে হকার। জনগণের বিঘ্ন ঘটিয়ে তারা যে বসে আছে, সেসব কি পুলিশের দেখার বিষয় না? তারা কি এগুলো দেখতে পায়না?’

আরএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!