পুলিশ হেফাজতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী হার্ট অ্যাটাক রোগীর বেডে একে-৪৭ রেখে চিকিৎসা

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাটহাজারী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে একে-৪৭ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। হাতে রাখার আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশ রাখছে আসামির বেডে। এছাড়া হাসপাতালে যে দেখতে আসবে তাকেও হাতকড়া পড়ানো হবে বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

তবে পুলিশ বলছে, হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার নিয়ম মেনেই সবকিছু হচ্ছে।

চট্টগ্রাম আদালত থেকে শেষমেশ জামিন পেয়ে গতকাল (রোববার) চট্টগ্রাম মেডিকেল ছেড়ে বাসায় গেছেন এই রোগী।

গত ১৯ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না দেখিয়ে অরুণ কুমার চৌধুরী (৫৯) নামের ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় ওয়ারেন্ট দেখত চাইলে পুলিশ দেখাতে পারেনি। এরপর থানায় নিয়ে গেলে সেখানে তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন।

আশঙ্কাজনক অবস্থায় অরুণ কুমার চৌধুরী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাকে হাতকড়া পড়ানোর পাশাপাশি কোমরে দড়ি দিয়েও বেঁধে রাখা হয়েছে। সঙ্গে রাখা হয়েছে একটি একে-৪৭ আগ্নেয়াস্ত্র।

সাধারণত হত্যা মামলার বা দাগী আসামিদের ক্ষেত্রে পুলিশ এমন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাহারা দেয়। কিন্তু অরুণ কুমারকে পাহারা দিতে এ অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

ওই ঘটনায় ‘চট্টগ্রামে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে হঠাৎ ধরে থানায় আনার পর হার্ট অ্যাটাক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিন। এরপর থেকেই এএসআই আবু তাহের হয়রানি বেশি করছে। প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের প্রভাবে অতি উৎসাহ দেখিয়ে তিনি এমনটা করে আসছেন বলে অভিযোগ অরুণ কুমারের পরিবারের।

জানা গেছে, ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে ৪০৬, ৪২০ ও ৫০৬ (২) ধারায় অরুণ কুমার চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। সেই মামলায় তার বিরুদ্ধে ওইদিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেন আদালত। কিন্তু গ্রেপ্তারের সময় পরোয়ানা দেখাতে পারেনি পুলিশ। এমনকি গ্রেপ্তারের ছয় ঘন্টা পরও পুলিশ পরোয়ানা দেখাতে পারেনি।

অথচ দি কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডউরের ৮০ ধারা অনুযায়ী, কাউকে গ্রেপ্তারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা দেখতে চাইতে পারেন। এটা ওই ব্যক্তির অধিকার। কারও বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট বা পরোয়ানা থাকলে সেই পরোয়ানা দেখাতে হবে গ্রেপ্তারের সময়। না দেখালে সেটা আইনের ব্যত্যয় হবে।

অরুণ কুমারের স্ত্রী চম্পা বণিক বলেন, ‘আমি যখন হাসপাতালে গেলাম তখন এএসআই আবু তাহের বলেন, এখানে যে তাকে (অরুণ কুমার) দেখতে আসবে তাকেও হাতকড়া পড়ানো হবে। আমার স্বামী স্ট্রোক করেছেন। এখনো সে অসুস্থ। তার বেডে পুলিশ একে-৪৭ এর মতো অস্ত্র রাখছে। অস্ত্রের ভয়ে সে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। ওই অস্ত্র পুলিশের হাতে থাকার কথা। কিন্তু তারা বেডে রাখছে কেন? মূলত হায়রানি করার জন্যই পুলিশ এমনটা করছে।’

তবে এসব বিষয় সঠিক নয় জানিয়ে হাটহাজারী থানার এএসআই আবু তাহের বলেন, ‘তারা অনেক কথা বলবে। এমন কিছু হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমীন বলেন,‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনি (অরুণ কুমার) অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সুস্থ হলে তাকে আদালতে হাজির করা হবে।’

আরএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!