পুষ্টিগুণে ভরপুর ‘ডুমুর’—চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসছে টনে টনে

এক সময়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বন-জঙ্গলে বা রাস্তার পাশে অহরহ দেখা মিলতো ডুমুর ফল। তবে এ ফল খাদ্য হিসেবে কেউ ছুঁয়েও দেখতো না। সময়ের ব্যবধানে সেই ডুমুর ফল এখন আমদানি হচ্ছে বিদেশ থেকে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মাত্র ৪০ কেজি ডুমুর আমদানি হয়েছিল। ২০১৯ আর আমদানি হয়নি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আবার শুরু হয় ডুমুর ফল আমদানি। সেই বছর ১৬ মেট্রিকটন ডুমুর আমদানি হয়েছে। চলতি বছর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ২৩ মেট্রিকটন, ফেব্রুয়ারিতে ১০ মেট্রিকটন ও মার্চ মাসে আমদানি হয়েছে ৬৫ মেট্রিকটন। চলতি বছরের তিন মাসে সৌদি আরব থেকে মোট ৯৮ মেট্রিকটন ডুমুর ফল আমদানি হয়েছে।

গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট ১১৫ মেট্রিকটন ডুমুর ফল আমদানি হয়েছে। যার মধ্যে এ বছরের তিন মাসেই আমদানি হয়েছে ৯৮ মেট্রিকটন। অনেকটা হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে ডুমুর ফল আমদানি।

এ বিষয়ে ঢাকার আমদানিকারক সাইদুর রহমান বলেন, কোরআনে ত্বিন ফলের কথা বলা হয়েছে। এ ত্বিন ফল আরবের প্রাচীন ফল। যা আমাদের দেশে ডুমুর নামে পরিচিত। এ ফলের চাহিদা আগে ছিল না। এখন বাড়ছে। তাই আমদানি করেছি।

ঢাকার অথেনটিক ইমপোর্টের সত্ত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম বলেন, ডুমুর সৌদি আরব থেকে দেশে আনতে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, বিক্রি করে তা পোষানো মুশকিল। এখনও ব্যাপক আকারে চাহিদা সৃষ্টি হয়নি আমাদের দেশে।

জানা গেছে, ডুমুর খুবই উচ্চমানের ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় স্মরণাতীতকাল থেকে ডুমুরের পাতা, কাঁচা ও পাকা ফল, নির্যাস, বাকল, মূল প্রভৃতি কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি ১০০ গ্রাম ডুমুরে খাদ্যশক্তি ৩৭ কিলোক্যালরি, ১২৬ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনসহ ভিটামিন এ, বি, সি ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে।

চট্টগ্রাম উদ্ভিদ সংগনিরোধ বিভাগের উপপরিচালক ও কৃষিবিদ মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ডুমুরের পুষ্টিগুণ হচ্ছে ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও ক্যালরি। এতে তিনটিই আছে। ওষধি গুণ হচ্ছে ডুমুর টিউমার ও অন্যান্য অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি নিবারণে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ডুমুরের ফল সবজি হিসেবে এবং পাতা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডুমুরগাছের পাতা শিং ও মাগুর মাছ পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, ডুমুর আমাদের দেশের পথে ঘাটে প্রায় দেখা যায়। কিন্তু কেউ চাষ করে না। তবে চাষ করলে অনেক লাভজনক হবে।

জানা গেছে, আমাদের দেশের রাজশাহী অঞ্চল, বিশেষত চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পার্বত্য এলাকার খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি, সিলেটের মৌলভীবাজার ও টাঙ্গাইলে ডুমুর তুলনামূলক বেশি জন্মে। দেশের অন্যত্রও বিক্ষিপ্তভাবে ডুমুরের গাছ দেখা যায়। কাঁচা ফল অতি উন্নত সবজি। শুধু ডুমুর বা অন্যান্য সবজির সঙ্গে মিলিয়ে ডুমুরভাজি অথবা এর ভর্তা উপাদেয়। এছাড়া ছোট মাছের সঙ্গে ডুমুরের ঝোলও রাঁধা হয়।

বিশেষজ্ঞদের তথ্য অনুযায়ী- গুটিবসন্ত, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, কিডনি ও মূত্রসংক্রান্ত সমস্যা, স্নায়বিক দুর্বলতা, মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধি, সর্দি-কাশি, ফোঁড়া বা গ্রন্থস্ফীতি (টিউমার) ও স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় ডুমুর কার্যকর।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা জানান, হঠাৎ করে বেড়েছে ডুমুর ফলের আমদানি। আগে এ ফল প্রতি কেজিতে ৭০ সেন্টে শুল্কায়ন হলেও এখন ১.৯০ সেন্টে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। আমদানি বৃদ্ধির সাথে সাথে সরকারও লাভবান হচ্ছে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!