পাহাড়তলীর ভোটে ওয়াসিম প্রার্থী হলেও স্বতন্ত্রের আড়ালে হীরনের ছায়া

নেতাদের একাট্টা জোটের সামনে ওয়াসিম একা

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৩ নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এখানকার সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হীরনকে বাদ দিয়ে মহানগর যুবলীগের সদস্য ওয়াসিম উদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

মোহাম্মদ হোসেন হীরন এই ওয়ার্ড থেকে তিন বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। পাশাপাশি খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কও তিনি। এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া কাউন্সিলরদের অনেকেই বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করলেও সে পথে হাঁটেননি হীরন। তবে নির্বাচনে না দাঁড়ালেও বেশ ভালোভাবেই নির্বাচনে আছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী বিরুদ্ধে এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুর রহমান। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে মাহমুদুরের আড়ালে মূলত ওয়াসিমকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন মোহাম্মদ হোসেন হীরন। তার সবুজ সংকেতেই নির্বাচন করছেন মাহমুদুর।

পাশাপাশি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার মালিকও ওয়াসিম ঠেকানোর এই জোটে একাট্টা হয়েছেন হীরন ও মাহমুদুরের পক্ষে। অন্যদিকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁঞা বার্ধক্যজনিত কারণে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হওয়ায় এই ওয়ার্ডে ভোটের লড়াইয়ে অনেকটা একলাই লড়তে হচ্ছে এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ওয়াসিম উদ্দিনকে।

তবে নিজেকে বিদ্রোহী কাউন্সিলর মানতে নারাজ এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়া প্রার্থী মাহমুদুর রহমান। এমনকি তার প্রার্থিতায় সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হীরনের কোন সম্মতি ছিল না বলেও দাবি তার। তবে হীরনকে নিজের ‘লিডার’ বলে মনে করেন তিনি।

তবে সব হিসাবনিকাশ শেষে ওয়াসিম ও মাহমুদুরের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে মূলত হীরন ও ওয়াসিমের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখছেন এলাকার ভোটাররা। পাশাপাশি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশংকাও করছেন এখানকার ভোটাররা।

যদিও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সার মালিক বিদ্রোহী প্রার্থীকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করছেন। তবে তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে দলীয় প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিনকে সামান্যতম সহযোগিতা না করার অভিযোগ আনছেন খোদ ওয়াসিম উদ্দিনই।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রথম ফোন দেই আমার মাকে। এর পরের ফোনটা আমি দিয়েছিলাম হীরণ ভাইকে। তারপর আমি মহিউদ্দিন আহমেদ ভাই ও কায়সার মালিক ভাইকে কল দিই। উনারা আমাকে দোয়া করেছেন। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছন। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় আমি তার প্রতিফলন পাইনি। উনারা ক্রমাগত আমাকে অসহযোগিতা করে যাচ্ছেন।’

কী ধরনের অসহযোগিতা করা হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি মনোনয়ন পাওয়ার পর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে বসার জন্য লিখিত চিঠি দিয়েছি। যেদিন আমি যাব বলেছি, সেদিন উনারা পার্টি অফিসে তালা মেরে চলে গেছেন। ওয়ার্ডের তিন ইউনিটে মহানগর আওয়ামী লীগের নির্দেশে দলীয় মেয়রপ্রার্থীকে নিয়ে সভা হয়েছে। সেখানে আমাকে দাওয়াত দিতে নগরের দপ্তর সম্পাদক কায়সার ভাইকে বললেও তিনি আমাকে দাওয়াত দেননি। দলীয় কোনো কর্মসূচিতেই উনারা আমাকে বলেন না। বরং বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে উনারা অনুষ্ঠান করেন।’

ইচ্ছে থাকলেও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের অনাগ্রহের কারণে বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি ওয়ার্ডের দলীয় প্রোগ্রামগুলোতে যেতে পারেন না জানিয়ে বলেন, ‘এর মধ্যে অনেকগুলো গন্ডগোল হয়েছে। আমার কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। থানা মামলাও নেয় না, অভিযোগ নিয়েছে সব ঘটনায়। তাই ইচ্ছা থাকলেও উনারা চান না বলে আমি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দলীয় প্রোগ্রামগুলোতে যাই না। কারণ বিব্রতকর কিছু যদি ঘটে।’

দলীয় প্রার্থী হলেও দলীয় কার্যক্রমে ওয়াসিম উদ্দিনকে কেন ডাকা হয় না— এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার মালিক বলেন, ‘আমরা তো রাজনীতি করি। দলীয়ভাবে আমরা ওয়ার্ডে যেসব কর্মসূচি দিই এখানে তো দলের যারা সমর্থক, কর্মী তারা অবশ্যই দলীয় প্রোগ্রামে আসতে পারে। এতে কোনো বাধা আছে? কোন বাধা তো নাই। সেক্রেটারি হিসেবে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করতে কে প্রার্থী— এটা তো আমার বিবেচ্য না।’

কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীর সাথে কোনো দূরত্ব আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কায়সার বলেন, ‘যেহেতু এখানে দুজন প্রার্থী, দুজনের মধ্যে দলের একজন মনোনয়ন পেয়েছে, আরেকজন বিদ্রোহী। সেহেতু মহানগর আওয়ামী লীগ আমাদের যেরকম সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবো।’

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে ওয়াসিম উদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এখনও মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন— এমন কথা জানিয়ে কায়সার বলেন, ‘আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। আমাদের ইউনিটের মিটিংয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীরা নগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জিজ্ঞেস করেছে কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যাপারে কী করবে। উনারা বলেছেন উনারা সিদ্ধান্ত দেবেন।’

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া এবং নিয়মিত আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া মাহমুদুর রহমান নিজেকে বিদ্রোহী প্রার্থী নন দাবি করে বলেন, ‘আমি তো আসলে বিদ্রোহী প্রার্থী না। আমি তো আসলে স্বতন্ত্র। যেহেতু দলে আমার কোন পোর্টফোলিও নাই।’

দলের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। এছাড়া আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা— এখানকার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। আমি তো পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগ করি।’

মোহাম্মদ হোসেন হীরনের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচনে নেমেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনি খুলশী থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। উনি আমাদের লিডার। কিন্তু আমার প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে উনার কোন নির্দেশ কিংবা সম্মতি নেই। আমি আমার এলাকার এক হাজার মুরুব্বির সমর্থনের লিস্ট জমা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছি।’

এই বিষয়ে কথা বলতে কয়েকবার মোহাম্মদ আলী হীরনের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!